রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০২:২৮ এএম

প্রাথমিকের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্ব নিতে ফের তোড়জোড় অধিদপ্তরের

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০২:২৮ এএম

প্রাথমিকের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই  ছাপার দায়িত্ব নিতে ফের  তোড়জোড় অধিদপ্তরের

প্রতি বছর নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই বিতরণের আগে শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরিসহ মুদ্রণ ও প্রকাশনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কাজও শেষ করতে হয় এনসিটিবিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে এনসিটিবি। তবে বই ছাপা নিয়ে নানা জটিলতায় ২০২৭ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার দায়িত্ব ফের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে (ডিপিই) দিতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য এনসিটিবির বর্তমান আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

এর আগে ২০২৩ সালে বই ছাপানোর জন্য গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে সম্মতি দিয়েছিল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পলাতক আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ফের এনসিটিবি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশের মাধ্যমে বই ছাপার কাজ ডিপিইকে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আইন সংশোধনের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনসিটিবিতে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বই ছাপার কাজসহ এনসিটিবির প্রাথমিক শাখায় নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে পারবে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনসিটিবি-সংশ্লিষ্টদের মতে, এই মুহূর্তে এমন কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি যে, সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পরিস্থিতির মতো অধ্যাদেশ তৈরি করে পাঠ্যবই মুদ্রণের কর্তৃপক্ষ পাল্টাতে হবে। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্ত ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এনসিটিবির সার্বিক কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংগত কারণেই নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে চাননি। 

এদিকে প্রাথমিকের সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো মনে করে, এনসিটিবি শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জনে অনেক ব্যস্ত থাকায় বইয়ের মুদ্রণ যথাসময়ে না হওয়া এবং কাগজের মান ঠিক থাকছে না। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার ব্যয়ভার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বহন করে। তাই এনসিটিবির পরিবর্তে শুধু বই ছাপার বিষয়টি ডিপিই করলে নির্দিষ্ট সময়ে মানসম্পন্ন বই পাওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর সাবেক সরকারের সিদ্ধান্তের মতো বই ছাপার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, এটি একটি ‘পলিসি ইস্যু’। তাই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবি আইন সংশোধনের উদ্যোগ : ১৯৮৩ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বর্তমান এনসিটিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অধ্যাদেশ বাতিল করে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’ বিলটি পাস হয়। আইন অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরিসহ মুদ্রণ ও প্রকাশনার সব কাজ করে এনসিটিবি। মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার ব্যয়ভার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর প্রাথমিক স্তরের ব্যয়ভার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বহন করে। তবে বই ছাপা ও এনসিটিবির প্রাথমিক শাখায় প্রাথমিক স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগসহ নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ ছিল শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ নিজেদের কাছে নিতে চাইছিল গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাবেক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরোধিতায় প্রথমে সফল না হলেও ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও বিতরণ’ বিষয়ের সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়, পাঠ্যপুস্তকের মুদ্রণ যথাসময়ে না হওয়া এবং কাগজের মান ঠিক না থাকায় অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট মহলে নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাথমিকের বইয়ের ব্যয়ভার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খাতে সংস্থান থাকে। বই মুদ্রণের জন্য এনসিটিবিকে ২ দশমিক ৮ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়, যা বাৎসরিক প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপানো হলে এই ব্যয় সাশ্রয় সম্ভব হবে। তাই নিজ ব্যবস্থাপনায় মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির সাবেক এক চেয়ারম্যান। 

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এনসিটিবির আইন সংশোধনের বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনসিটিবির চেয়ারম্যান রবিউল কবীর চৌধুরীও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় আইন সংশোধনের বিষয়ে দুই উপদেষ্টা ঐকমত্য প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের মতামত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টির নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন। পরবর্তী সময়ে ২১ মে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইসরাত জাহান সাক্ষরিত আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মতামতের জন্য এনসিটিবিতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে এনসিটিবি এখনো কোনো মতামত দেয়নি বলে জানিয়েছে সূত্র। 

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ বর্তমানের ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক (সংশোধন) ২০২৫, নামে অভিহিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখার কর্মকর্তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বা জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাবেন। প্রাথমিক স্তরের বইয়ের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করবে। এ ছাড়া বোর্ডের কার্যাবলি: ধারা ৮-এর (জ) ও কমিটি অংশের ৩ (ঘ) ধারায়ও পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। 

আইন সংশোধন উদ্যোগের বর্তমান অবস্থা জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-১) অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহারের সঙ্গে। প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে তিনি আরেক কর্মকর্তাকে দেন। এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে মাত্র একটি বৈঠক হয়েছে। আরও বৈঠক হবে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি হবে। মতামত নেওয়া হবে, অনেক কাজ আছে। তবে এই কর্মকর্তা তার নাম ও পদবি বলতে চাননি। 
অন্যদিকে এ বিষয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়) ইসরাত জাহান বলেন, ‘এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দুই উপদেষ্টা কথা বলেছেন। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করবে।’ এটি আওয়ামী সরকারেরও সিদ্ধান্ত ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি একটি ‘পলিসি ইস্যু’। 

এনসিটিবিতে নানা শঙ্কা : বোর্ড সূত্রের দাবি, শিক্ষাক্রম তৈরিসহ বই ছাপার কাজ সুসমন্বয়ের মাধ্যমে সাবলীলভাবে করার জন্য ১৯৮৩ সালে সবকিছু এনসিটিবির অধীনে এক ছাতার নিচে আনা হয়। এখন বই ছাপার কাজ প্রাথমিক অধিদপ্তরে গেলে নানান জটিলতা সামনে আসবে। একই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে এনসিটিবি। 
জানা গেছে, আইন সংশোধন করা হলে একাডেমিক, প্রশাসিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ক্ষতির মতো সমস্যায় পড়বে এনসিটিবি। আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে জানা গেছে, এনসিটিবি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় নিজেদের আয় থেকে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপানোর রয়্যালটি বাবদ পাওয়া টাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। প্রতি বছর এনসিটিবি যে বই ও শিক্ষক সহায়িকা ছাপে, তার প্রায় অর্ধেক প্রাথমিক স্তরের। 

এ বিষয়ে এনসিটিবি সূত্র জানায়, বোর্ডে বর্তমানে ৩৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন ৭০ থেকে ৮০ জন। বাকিরা এনসিটিবির নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী। এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় বাবদ বিপুল টাকার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই থেকে পাওয়া রয়্যালিটি দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করা হয়। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও জানা গেছে, প্রতি বই ছাপা বাবদ ২ টাকা ৮ পয়সা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন বই ছাপার কাজ প্রাথমিক অধিদপ্তরে গেলে বেতন-ভাতা নিয়ে আর্থিক ঝুঁকি তৈরি হবে। প্রেষণে আসা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কলেজে ফিরে যাবেন। নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পড়বেন বিপদে। বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, এনসিটিবিতে কর্মরতরা বই ছাপার কাজে ১৫ থেকে ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন। কিন্তু ডিপিই একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতাও কম। অন্যদিকে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের প্রস্তাবে এনসিটিবির প্রাথমিক শাখায় বা ডিপিই বা নেপ থেকে কর্মকর্তা পদায়নের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই শাখায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে পদায়ন নিয়েও একধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। 
এ বিষয়ে এনসিটিবির সাবেক এক চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিক শাখার সদস্য পদটি একজন পূর্ণ অধ্যাপকের। এই পদে যদি ডিপিই বা নেপ থেকে উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক পদের কাউকে পদায়ন করা হয়, সেটা যৌক্তিক হবে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক আলাদাভাবে চিন্তা না করে এক ছাতার নিচে রাখা উত্তম বলেই মনে করেন তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!