এক বছর আগে ৫ আগস্ট দেশে বহুল প্রত্যাশিত একটি পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ভালো পরিবর্তন চায়। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষ হঠাৎ করে বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে’।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, তার প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রস্তাব বিএনপি অনেক আগেই জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল’।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ড্যাব) জাতীয় কাউন্সিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সম্মেলনে তিন হাজার ১১৭ জন কাউন্সিলর ড্যাবের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আজকে যেসব রিফর্ম নিয়ে কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকার রিফর্ম কমিটি গঠন করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছেÑ এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে যেসব প্রস্তাব, তার ৯৯ শতাংশই বিএনপি আড়াই বছর আগে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল।’
ড্যাবের কাউন্সিল প্রমাণ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেইÑ এমন বক্তব্য পুরোপুরি সত্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে দেশকে পরিচালিত করেছেন। তাই বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা, ধীরে ধীরে তার ভিত শক্ত করা’।
নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশাকে বাস্তবায়নের জন্য সবার কন্ট্রিবিউট করা দরকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরে যারা জীবন দিয়েছে, বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে তাদের প্রত্যাশা আমরা সকলে মিলে যদি পূরণ করতে পারি তবেই আমরা আমাদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। এ জন্য আমাদের প্রত্যেককে একটু করে হলেও কন্ট্রিবিউট করতে হবে’।
এ সময় গত আট বছর ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা সব চিকিৎসকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ডা. এ. টি. এম. ফরিদ উদ্দিনসহ একটি চিকিৎসক দল বিগত আট বছর ধরে আমার মায়ের অর্থাৎ সারা দেশের মানুষ যাকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হিসেবে চেনে সেই মানুষটিকে চিকিৎসা দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার সন্তান হিসেবে এবং পরিবারের সদস্য হয়েও আমরা যারা এই সময়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পাশে থাকতে পারিনি, আমরা আমাদের অন্তরের অন্তরস্থল থেকে এই চিকিৎসকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
তিনি বলেন, ‘আমি সন্তান হিসেবে, পরিবারের সদস্য হিসেবে যা করতে পারিনি ওই কয়েকজন চিকিৎসক তা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে একজন সন্তানের চেয়ে তারা কোনো অংশে কম নয়। ক্ষেত্রবিশেষে সন্তানের চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জন্য সামগ্রিকভাবে পুরো চিকিৎসক সমাজের কাছে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ’।
রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ায় ড্যাবের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে বহু সাধারণ মানুষ যারা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না, কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন এবং প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই মানুষগুলো বিভিন্নভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন, আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন। ড্যাবের সদস্যরা এই নির্যাতিত মানুষের চিকিৎসা করেছেন, সেবা দিয়েছেন। তাই চিকিৎসাপ্রাপ্ত সব মানুষের পক্ষ থেকেও আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ এবং পরিচালনা করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।
তারেক রহমানই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই বাংলাদেশের ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুধু নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা, ভবিষ্যৎ কা-ারি, ভবিষ্যতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখানে বসে আছেন। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আমাদের এই নেতা আমাদের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী, তার দৃষ্টিতে এটা আনতে চাই’।
তিনি আরও বলেন, ‘তার স্ত্রীও (জুবাইদা রহমান) একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, আপনাদের এখান থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন করেছেন। এই বিষয়টার দিকে তিনি অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ ১৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এটা বিশাল একটা দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। এই সময়ে পুরো মিলনায়তনে তুমুল করতালি দিয়ে চিকিৎসকরা তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
ফখরুল বলেন, ডা. ফরিদ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন চিকিৎসক, আমার স্ত্রীর চিকিৎসক এবং আমি তার কাছে অত্যন্ত ঋণী, ডা. সুমন আমার স্ত্রীর চিকিৎসা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে করেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, উনি (ডা. ফরিদ) আমাকে বলছিলেন, ‘উনি যে বিষয়টার ওপর এখানে বিশেষজ্ঞ, বিলাত থেকে এসে এখানে তিনি ক্যানসারের ওপরে কাজগুলো করতে চান, সেই কাজগুলো করতে পারছেন না। মেধাবী চিকিৎসক আপনারা এখানে একটা সেন্টার গড়ে তুলতে চান যেটা হবে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ কিন্তু আমরা সেটা করতে পারছি না’।
ওষুধনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওষুধনীতি বিশেষ করে যারা ওষুধ তৈরি করেন, ম্যানুফ্যাকচারারস তারা দুদিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন, দেয়ার ইন সিরিয়াস ক্রাইসিস। বর্তমান সরকারের যিনি সহকারী উপদেষ্টা আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, তিনি এমন কিছু ব্যবস্থা বা আইন দিচ্ছেন যাতে করে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই যে বিষয়গুলো এগুলো কিন্তু আমাদের এড্রেস করতে হবে’।
আপনার মতামত লিখুন :