ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

দুই দাবিতে জগন্নাথের উপাচার্য ভবনে তালা শিক্ষার্থীদের 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক তালাবদ্ধ করে সেখানে অবস্থান নেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে তারা উপাচার্যের কক্ষের সামনে ‘ব্রেক দ্য সাইলেন্স’ কর্মসূচি পালন করেন। 

এর আগে জকসুর নীতিমালা পাস হওয়ার পর তা ইউজিসি, শিক্ষা ও আইন মন্ত্রণালয়ের ধাপ পার হয়ে আইনি রূপ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য। দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্য রেজাউল তার কক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মঙ্গলবার আমরা সিন্ডিকেট সভা ডেকে নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করব। সেই নীতিমালা পাস হলে তা ইউজিসিতে যাবে। তারপর সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয় যাবে। সেখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আইন পাস হবে। আর আইন হওয়ার পর আগামী ৯০ দিনের মধ্যে জকসু নির্বাচনের আয়োজন করব। তিনি বলেন, জকসু নিয়ে কাজ করতে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা পাইনি, পরবর্তীতে বাধা এলে আমিও সবাইকে সব কথা জানিয়ে দেব।

তবে উপচার্যের আশ্বাসে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আন্দোলনত শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তক্রমে রেজাউল করিমকে ভেতরে রেখেই বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে উপাচার্য ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘৮টা টু ৮টা, বাজায় কার ঘণ্টা’, ‘ভিসি স্যার জানেন না নাকি, আমরা এখানে বসে গেছি’, ‘ভিসি স্যার শুনছেন নাকি, আমরা এখানে বইসা গেছি’, ‘হচ্ছে হবে বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’, ‘করছি করছি বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘সিন্ডিকেটের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’, ‘বৃত্তি আমার অধিকার, মুছে দেওয়ার সাধ্য কার’, ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’সহ বিভিন্ন স্লোগান তোলেন।

মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল জনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে তামাশা করছে। তারা সব সময় আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা দেখা যায়। সব ক্যাম্পাসের সব দাবি পূরণ করা হয়, কিন্তু জবিয়ানরা বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। আমাদের দাবি না মানলে প্রশাসনকে চরম মূল্য দিতে হবে। 

অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। ‘লংমার্চ টু যমুনা’র পরও এখনো আন্দোলন করতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। সম্পূরক বৃত্তি কারো দয়া নয়, আমাদের অধিকার। জকসু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চার স্থান। সুস্পষ্ট রোডম্যাপসহ আমরা আমাদের দাবির বাস্তব প্রতিফলন চাই।

জগন্নাথ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হওয়ার আগে কলেজ সময়ে মোট ১৪ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে। সবশেষ ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন মো. আলমগীর সিকদার লোটন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন।

এরপর ২০০৫ সালে কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫’-এ ছাত্র সংসদ সম্পর্কিত কোনো ধারা না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বহুবার নির্বাচন দাবি করলেও এই ‘আইনি জটিলতার’ কারণে তা আয়োজন করা যায়নি। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো জকসুর জন্য একটি নীতিমালার খসড়া উত্থাপন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার শর্তে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নীতিমালা সংশোধনের জন্য নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়।