ঢাকা শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ১১:০২ পিএম
ঢাবি

আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও কাদের সিদ্দিকীর ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ অন্তত ১১ জনকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা, আইনজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ডিআরইউর একটি গোলটেবিল বৈঠকে বহিরাগতদের হামলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একদল ব্যক্তি নিজেদের ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান জানান, ডিআরইউ থেকে কয়েকজনকে শাহবাগ থানায় আনা হয়েছিল। পরে শাহবাগ থানার ওসি জানান, তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত ডিবি নেবে। এর আগে সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ‘মঞ্চ ৭১’। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত এই প্ল্যাটফর্মের প্রথম কর্মসূচি ছিল অনুষ্ঠানটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও গণফোরামের সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেনের।

আলোচনায় প্রথম বক্তা হিসেবে অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধান ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। এর পেছনে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জড়িত। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছেন। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই একদল যুবক স্লোগান দিতে দিতে মিলনায়তনে প্রবেশ করে। তারা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা এক হও, লড়াই করো’Ñ এমন স্লোগান দিতে থাকে এবং গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ এসে তাদের হেফাজতে নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ‘জুলাইযোদ্ধা’ ব্যানারে আল আমিন রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক অনুষ্ঠানে উপস্থিত লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যদের ঘেরাও করে রাখেন এবং মিলনায়তনে তাদের অবস্থান ঠেকানোর চেষ্টা করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সব দল-মতের মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমরা অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম। লতিফ সিদ্দিকী সাহেব এসেছেন, কিন্তু কামাল হোসেন সাহেব আসেননি। এর মধ্যে ২০-২৫ জন যুবক হইচই শুরু করে, আমাদের ঘিরে ফেলে। তবে তারা কারো গায়ে হাত তোলেনি। পরে পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করে। রমনা বিভাগের এডিসি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে একটি ভাঙা টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। মিলনায়তনে অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি কিছু লোককে হট্টগোল করতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি জানতাম না এখানে সমস্যা হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েই এসেছিলাম। গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল আমিন রাসেল নামের একজন বলেন, আমরা জুলাইযোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাইযোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।

ঘটনাস্থলে ‘জুলাইযোদ্ধাদের’ সঙ্গে আসা পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, একটি গোষ্ঠী একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি করে চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, একাত্তর আমাদের ভিত্তি এবং চব্বিশ আমাদের মুক্তি। এখানে যারা জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই চব্বিশের খুনের সঙ্গে জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। আমরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছি। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মঞ্চ ৭১-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না তা দেখা হচ্ছে।

ডিআরইউর নিন্দা ও প্রতিবাদ: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) একটি গোলটেবিল বৈঠকে বৃহস্পতিবার কতিপয় বহিরাগতদের হামলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একদল ব্যক্তি নিজেদের ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তাদের নিবৃত্ত করতে গেলে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নান মারুফ, সদস্য আসিফ শওকত কল্লোল, সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদসহ কয়েকজনকে নাজেহাল করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ।

এক বিবৃতিতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সবারই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এই অনুষ্ঠানটি ঘিরে কতিপয় লোক গতকালই (বুধবার) ফেসবুকে হুমকি দিয়ে প্রচারণা চালায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানাকে অবহিত করার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর পুলিশকে অবহিত করার পর তারা এসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।