ঢাকা শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

হাইকোর্টে প্রতিবেদন - সাদাপাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি মামলার নির্দেশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ১১:০৪ পিএম
হাইকোর্ট

সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কোয়ারি থেকে পনেরোশ থেকে দুই হাজার ব্যক্তি সাদাপাথর লুট করার ঘটনায় খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এবং বিধিমালা ২০১২-এর ৯৩(১) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার খনিজ সম্পদ ও পরিবেশ সচিবের পক্ষে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদনে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ আগস্ট তারিখে কোম্পানিগঞ্জ থানায় মামলা নং০৯, ধারা খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ তৎসহ ৩৭৯/৪৩১ পেনাল কোড ধারায় দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৫ আগস্ট থেকে সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০০ থেকে ২০০০ ব্যক্তি পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য ২১ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন), জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে আহ্বায়ক করে বুয়েটের একজন অধ্যাপকসহ মোট ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

জেলা প্রশাসক এভিডেভিট দাখিল করে আদালতকে অবগত করেনÑ পাথর প্রতিস্থাপনের কাজ চলমান, দায়ি ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত এবং ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারি এরিয়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় সাদাপাথর লুটপাটের সংবাদ প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রিট পিটিশন দায়ের করলে গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে বিবাদীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া ওই সাদাপাথর স্থানীয় সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সংগ্রহ করে ভোলাগঞ্জের ওই নির্দিষ্ট স্থানে সাদাপাথরগুলোকে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসন, বিজিবি, র‌্যাবসহ মোট পাঁচজনকে সাদাপাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে এফিডেভিট আকারে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন।

পরিবেশ সচিব ও খনিজ সম্পদ সচিবকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে যেখানে বুয়েটের একজন প্রফেসর থাকবেন তাদের মাধ্যমে পাথর সরানোর কারণে পরিবেশের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। স্থানীয় প্রশাসন ও বিবাদীদের ওই এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিন ও রাতে তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত আদেশে জানানো হয়, সিলেটে পাথর কোয়ারিগুলোর ইজারা প্রদান বন্ধ রয়েছে। পাথর উত্তোলনে উচ্চ আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবু অবৈধভাবেই পাথর উত্তোলন ও লুট চলছে। এতে আরও বলা হয়, যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাসমূহের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হতে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন, সংরক্ষণ, পরিবহন, লুণ্ঠন ও পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এবং যেহেতু প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেহেতু, সিলেট জেলায় অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ আদেশ সরকারি আদেশ হিসেবে গণ্য হবে বলেও আদেশে বলা হয়।