দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকা বন্দিদের সাজা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। সেক্ষেত্রে বেশি বয়স্ক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যাবজ্জীবন কারাদ-ের মেয়াদ কমানোর চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ১৮৬০ সালের পেনাল কোড অনুযায়ী বাংলাদেশে যাবজ্জীবন কারাদ-ের মেয়াদ বর্তমানে ৩০ বছর। বয়স বিবেচনায় নারীদের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদ-ের মেয়াদ হতে পারে ২০ বছর। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদ-ের মেয়াদ আরেকটু বেশি হবে। তবে যাবজ্জীবন কারাদ-ের এ বিধান নির্ভর করবে সাজার সময়কালে আসামির বয়সের ওপর। তবে এ বিধান এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং এতে কিছু শর্ত যুক্ত থাকবে।
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরস্কার ঘোষণার পর লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শতভাগ দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। এটা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন ছিল না। জাতীয় নির্বাচনের যথেষ্ট সময় আছে। এ নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। নিয়োগ, প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম চলছে।
দুর্গাপূজার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পূজা একেবারে ঘনিয়ে এসেছে। পূজার ক্ষেত্রে যত ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের নিতে হবে। পূজা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এটার পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কে কোন ধর্মের আমরা সেটা দেখব না। আমাদের সবার দায়িত্ব তারা যেন পূজাটা ভালোভাবে করতে পারে। এজন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা দরকার।
তিনি বলেন, পূজার ক্ষেত্রে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য আমাদের যা যা করার আমরা সবই করব। পূজাটা যেন নির্বিঘেœ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে করতে পারে সেজন্য আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব। এটার পবিত্রতা যেন রক্ষা হয় আমরা সব ব্যবস্থা করব।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেক জায়গায় একটু সমস্যা আছে। কমিটির নিজেদের মধ্যে একটা কোন্দল রয়ে গেছে। আমরা অনুরোধ করব, তাদের নিজেদের কোন্দলটা মিটিয়ে পূজাটা যেন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। আপনারা (সাংবাদিক) লোকজনকে বলবেন, আমরাও বলব। আমরা আশা করি, পূজাটা খুব ভালোভাবে ও নির্বিঘেœ উৎসবমুখর পরিবেশ এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দু-একটি নির্বাচন হয়ে গেল, এসব বিষয়েও একটু আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিরোধসহ সীমান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে পূজা এবং ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন নিয়ে যে সমস্যা, সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ফরিদপুরের দুই ইউনিয়নের কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফরিদপুরে দুটি ইউনিয়ন আগে যে সংসদীয় আসনে ছিল, সেখান থেকে অন্য আসনে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশন করেছে। যুক্তি-তর্কের সবকিছু শোনার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়েই এলাকার লোকজনের মধ্যে একটা ক্ষোভ চলছে।
তিনি বলেন, এটা নিয়ে আসলেই যদি তাদের ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা যথাযথ চ্যানেলে জানানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই দুটি ইউনিয়নে কতজন লোক আর কতজন ভোটার? অথচ তারা লাখ লাখ লোককে জিম্মি করে রেখেছে। এটা কোনো অবস্থায়ই বরদাশত করা হবে না। তারা যদি আজকের মধ্যে এটা সমাধান না করে, তাহলে আমরা আইন প্রয়োগ করে সড়ক ক্লিয়ার করব।