ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মনু নদে ভেসে আসা গাছের  খ-াংশই জীবিকার ভরসা

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

*** এক পিকআপ কাঠের দাম ৪-৫ হাজার টাকা
*** বৃষ্টির মৌসুম যত দীর্ঘ হয়, তত আয়ও বাড়ে

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদের স্রোত বয়ে আনে গাছের খ-াংশ। সেগুলোই পারিবারিক জ্বালানি কাজে ব্যবহার বাদে জীবনধারণের ভরসা কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের মনু নদ তীরবর্তী বহু পরিবারের। বর্ষায় ভারি বৃষ্টির সঙ্গে মনু নদ ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে যখন ফুলে-ফেঁপে ওঠে, তখন স্রোতে ভেসে আসে গাছের খ-াংশগুলো। এ সময় ঝুঁকি নিয়ে নদের পানির স্রোতের মাঝে নেমে এসব তুলে আনছে স্থানীয়রা। পরে শুকিয়ে কাঠ হিসেবে কিছু নিজেরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আর বাকিগুলো বিক্রি করা হয় বাজারে। এতে স্থানীয় অর্ধশতাধিক পরিবার এভাবেই তাদের সংসার চালায়।

মনু নদ ভারতের মিজোরামের পাহাড়ি এলাকা থেকে সৃষ্টি হয়ে পুরো ত্রিপরা পার হয়ে শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে ৭৪ কিলোমিটার। বর্ষার সময় নদে তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসে ছোট-বড় গাছের খ-। সেগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে রশির মধ্যে লোহার আংটাজাতীয় বস্তু বেঁধে নদীতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি দিয়ে টেনে ওপরে আনা হয়। অনেকে সাঁতার কেটে নদী থেকে এসব তুলে আনে। কয়েকজন মিলে দল বেঁধে এই কাজ করে। বৃষ্টির মৌসুম যত দীর্ঘ হয়, গাছের পরিমাণের সঙ্গে আয়ও বাড়ে।

সরেজমিন শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল গ্রামে দেখা যায়, নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর সারি সারি কাঠের স্তূপ। যেন করাতকলের আঙিনা। পানিতে ভেসে আসা এসব গাছের খ-াংশ শুকিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। এরপর পিকআপ বা ট্রলি গাড়িতে ভরে বিক্রি করা হয়। 

লিয়াকত আলী নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘নিয়মিত এখন থেকে জ্বালানি কাঠ কিনে নিই। এখানে দুভাবে বিক্রি হয়, কেউ চাইলে বড় বড় গাছের খ- নিতে পারেন, আবার ছোট করা কাঠের স্তূপও নেওয়া যায়। আমি তিন হাজার টাকা দিয়ে এক ট্রলি জ্বালানি নিয়েছি। এটা বাজার থেকে কিনতে গেলে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লাগবে।’

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আরিফ আলী জানান, আমরা নদী থেকে কাঠ সংগ্রহ ও বিক্রি করি। কাঠের স্তূপ দেখে এগুলো সংগ্রহ করা  সহজ মনে হলেও আসলে এই কাজ অনেক কঠিন। তবে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের গ্রামেই প্রায় ৩০টি পরিবার আছে, যারা এই কাজে যুক্ত।