ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পালন করছেন কারিগররা। দশভূজা দেবী দুর্গা, তার পাশে সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক-গণেশ, এবং অশূর বধের দৃশ্য প্রতিফলিত প্রতিমা তৈরির মাধ্যমে পূজার সাজসজ্জা সম্পন্ন করা হচ্ছে।
চলতি মাসের ২৭ তারিখে বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সূচনা হবে এবং ২৮ তারিখে মহাষষ্ঠির মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় ৪৫০ এর অধিক মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সীমান্তবর্তী মহেশপুর উপজেলায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিরাপত্তা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিমা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরররা বলছেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও গেল বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, বিচালী, পেরেক, সুতালী, মাটি, চটসহ অন্যান্য জিনিসের। সাধারণত একটি প্রতিমা তৈরিতে ২০ পিস বাঁশ, ৫শ’ আটি বিচালী, ১০ কেজি সুতলী, চার ভ্যান মাটি, পাটের আঁশ ৫ কেজি, চট ৩০ গজ, পেরেক ১০ কেজিসহ অন্যান্য জিনিস দরকার হয়। তবে প্রতিমার নকশার উপর ভিত্তি করে উপকরণের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে।
এবার কারিগরদের প্রতি পিস বাঁশ ৩৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে যা গত বছরের তুলনায় ৫০ টাকা বেশি, সুতালি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৬০ টাকা, প্রতি ভ্যান মাটি এক হাজার টাকা, প্রতি গজ চট ৮০ টাকা যা গত বছর ছিল ৬৫ টাকা, পাটের আঁশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা যা গত বছরের তুলনায় ৫০ টাকা বেশি। এ ছাড়া প্রতিমার রং করতে খরচ হয় গড়ে ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে শহরাঞ্চলে এক একটি প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। তবে গ্রামাঞ্চলের প্রতিমা তৈরি খরচের পরিমাণ থাকে কম। প্রতিমার প্রথম পর্যায়ে কাঠামো তৈরি ও প্রথম মাটির কাজ করতে সময় লাগে ৮ দিন। এরপর ১০ দিন বিরতি শেষে দো-মাটির কাজ করা হয়, যেখানে প্রায় চার দিন লেগে যায়। আবারও পাঁচ দিন বিরতি শেষে রঙের কাজ করা হয় যেখানে তিন দিন সময় লেগে যায়।
প্রতিমা তৈরির কারিগর অরবিন্দু পাল বলেন, উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে লভ্যাংস কমলেও সাজসজ্জায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। চন্ডিমতে ধর্ম ভিত্তিকভাবে যেন পূজাটা হয় সেভাবেই প্রতিমার কাজ করা হচ্ছে। গাছ, ফুলগাছ, পেছনে গ্রাফিক্স, মা দুর্গা অশূর নিধন করছে এমন নানা ডিজাইন থাকছে প্রতিমা তৈরিতে।
কেন্দ্রীয় বারোয়ারী পূজামন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সাধন সরকার বলেন, পূজার প্রস্তুতি সুন্দরভাবেই এগিয়ে চলেছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তারাও খোঁজ নিচ্ছে। পূজায় দুর্গা মা’র কাছে আমাদের প্রার্থনা সারা দেশে যেন মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে, কোনো হিংস্রতা না থাকে। সবার মধ্যে যেন মা সুসম্পর্কের বলয় তৈরি করেন।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও পূজা ঘিরে জেলা প্রশাসনের গঠিত নিরাপত্তা কমিটির প্রধান রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, অপ্রিতীকর পরিস্থিতি এড়াতে এরই মধ্যে নিরাপত্তামুলক সভা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির টহল, অন্যান্য স্থানে পুলিশের টহল বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল কাজ করবে।