ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাস না পেরোতেই ৫ কোটির বাঁধে ধস

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

***  যথাযথ ডাম্পিং না করে বৃষ্টির মধ্যে বালুমাটির ওপরে ব্লক বসানোর অভিযোগ
*** আগস্ট মাসের শুরুতেই বাঁধটির ২০০ মিটার এলাকা ধসে যায়। এতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

রংপুরের পীরগঞ্জে আখিরা শাখা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ৫ কোটি টাকার বাঁধ এক মাসও টেকেনি। চতরা ইউনিয়নের ওই নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজের ২০০ মিটার এলাকা আগস্ট মাসের শুরুতেই ধসে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নি¤œমানের কাজ, দুর্বল মনিটরিং এবং বর্ষার মধ্যে যথাযথ ডাম্পিং ছাড়া ব্লক বসানোয় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা না হলে আন্দোলনে যাবেন তারা।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন (১ সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত বছর ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৭ টাকায় আখিরা শাখা নদীর চতরাহাট এলাকায় ৮০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ পায় রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসিবুল হাসান এন্টারপ্রাইজ। ২০২৪ সালের ১ মার্চ কাজ শুরু করে ওই বছরের ১১ নভেম্বর শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় মেয়াদ বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুলাই মাসে কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে আগস্ট মাসের শুরুতেই বাঁধটির ২০০ মিটার এলাকা ধসে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ ডাম্পিং না করে বৃষ্টির মধ্যে ব্লক বসানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং না থাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নি¤œমানের কাজ ও দুর্নীতির কারণে বাঁধের এমন অবস্থা হয়েছে। বাঁধ ধসে যাওয়ায় এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চতরাহাট এলাকার বাসিন্দা গফুর মিয়া বলেন, ‘নদীর বাম পাশের প্রায় ৩০০ মিটার অংশে দুই দফা ব্লক ধসে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে মেরামত করলেও টিকছে না। বর্ষার মধ্যে কাজ শুরু করায় ব্লকগুলো মজবুত হয়নি। তা ছাড়া কাজের মধ্যে নদীর বালুমাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার ওপর অসম বেডে ব্লক বসানোয় সেগুলো ভেঙে যাচ্ছে।’

নদীর বাম তীরের বাসিন্দা গৃহবধূ লাকী বেগম বলেন, ‘কাজ ভালো হয় নাই। এগুলো এমনিতে ভাঙি গেছে। কাজ ভালো হলে কি ভাঙি যায়? হামরা এগুলো ভালো করি চাই। হামার ঘরবাড়ি ভাঙি গেছে, সেগুলোও চাই।’

আশরাফুল ইসলাম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এটে যে কাজ হইছে তাক খুব নরমাল কাজ। কাজ শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত ধসে পড়ে গেছে। বাঁশ দিয়া ঠেকা সারা কাজ হইছে। টাকা অপচয় করছে। কাজ ঠিকভাবে করছে না। ধসে যাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী দুর্ভোগে আছি। তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই যেন কাজটা ভালো করি করা হয়।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওই প্রকল্পের ম্যানেজার শ্যামল  বলেন, ‘মাসখানেক আগে কাজ শেষ হয়েছে। মাটির কারণে ধসে গেছে। স্যারেরা পরীক্ষা করতেছে। একটি টিম আসছিল। আরও টিম আসবে। দুই তিন দিনের মধ্যে আমরা মেরামতের কাজ শুরু করব।’

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে সাইটে গিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে এক জায়গা দিয়ে পানি নামে, পানি নামতে গিয়ে বাঁধ ধসে গেছে। মাটিও খারাপ। জুনে কাজ শেষ হলেও বাঁধটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণে থাকবে এক বছর। এর মধ্যে সমস্যা হলে তারা মেরামত করে দেবে।’ কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।