- গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন পীরগাছা উপজেলার শতাধিক মানুষ
- অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় ১ হাজার গবাদিপশু
- আক্রান্ত পশু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরইমধ্যে উপজেলাজুড়ে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত শতাধিক মানুষ। এ ছাড়াও মারা গেছে প্রায় ১ হাজার গবাদিপশু। তবে অ্যানথ্রাক্সের কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
মারা যাওয়া দুজন হলেনÑ উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) ও পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনীরাম গ্রামের কমলা বেগম (৬০)।
গত আগস্ট মাসে অসুস্থ গরুর মাংস কাটতে গিয়ে সংক্রমিত হন উপজেলার পারুল ইউনিয়নের মাইটাল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। কয়েক দিনের মধ্যেই তার শরীরে জ্বর, ফোড়া ও ঘা ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাকে রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
এ ছাড়াও আনন্দী ধনিরাম গ্রামের গৃহিণী কমলা বেগমও অসুস্থ গরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে তার অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এখনো তার পরিবারের তিন সদস্য সংক্রমিত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
কমলা বেগমের সন্তান দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি অসুস্থ গরুর মাংস খেলে বা ছুঁলেই এমন রোগ হয়। মায়ের মৃত্যু হয়েছে, আমি, আমার বোন আর আমার নাতি আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছি।’
পারুল ইউনিয়নের বিরাহীম গ্রামের হুমায়ন খান জানান, চলতি বছরের কোরবানির ঈদের পর থেকে অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই এলাকায় শত শত গবাদিপশু আক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। সঠিক সময় গরুর চিকিৎসা দিলে আক্রান্তের হার কমে আসত বলে জানান তিনি।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু ছাঈদ জানান, আক্রান্ত পশুর নমুনা পরীক্ষায় এ্যানথ্রাক্স ধরা পড়েছে। এরইমধেই পীরগাছা ও আশপাশে ৩২ হাজার পশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম চলমান। আশা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত বলেন, অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। মাসখানেক আগে কিছু গবাদিপশুর শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয় ও মারা যায়। ওই গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি করা থেকে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনাগুলো পরীক্ষা করে গত সপ্তাহে জানিয়েছে, মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। যে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, আমরা বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানিয়েছি। তারা এখানে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ একটি দল গত শনিবার রংপুরে আসেন। গতকাল রোববার তারা ঘটনাস্থলে গেছেন বলে জানা গেছে।
প্রাণি বিশেষজ্ঞ তাহের উদ্দিন ঠাকুর জানান, উপজেলা প্রশাসনের উচিত পশু জবাইয়ের সময় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। আক্রান্ত পশু জবাই করা ও এর মাংস বিক্রি বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।