ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম

৪ আগস্টই ড. ইউনূসকে  সরকারপ্রধান হওয়ার  প্রস্তাব দেওয়া হয়

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১১:২১ পিএম

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগের দিন ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি হিসেবে দায়ের করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষীর শেষ দিনে তিনি এ জবানবন্দি দেন। এদিন সকাল সোয়া ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবি জানাই এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়। আমরা আরও দাবি জানাই যে, কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন আমরা মেনে নেব না।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, পুরো আন্দোলনজুড়ে পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় ও নির্যাতন করে। 

এনসিপির আহ্বায়ক উল্লেখ করেন, এসব হত্যাকা- ও নৃশংস ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান যারা ছিলেন তাদের দায়ী করছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এইসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। তারা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও নিরঙ্কুশ করতেই এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। 

নাহিদ বলেন, পরবর্তী সময়ে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আন্দোলনকারীদের ওপর শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার ও নেথাল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনি প্রার্থনা জানান, এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। 
জবানবন্দির একপর্যায়ে এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। তবে সেদিন কারফিউ ঘোষণা করে দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় সরকার। আমরা জানতে পারি, ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এ জন্য আমরা মার্চ ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি। 

তিনি বলেন, আমরা ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষে অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন মাহফুজ আলম। আমরা নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করি। তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে নাহিদের। তবে তা শেষ না হওয়ায় আজ পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।