মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ১১:২৬ পিএম

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের নিবন্ধ

এশিয়ার দুর্নীতির টাকার নিরাপদ গন্তব্য লন্ডন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ১১:২৬ পিএম

এশিয়ার দুর্নীতির টাকার নিরাপদ গন্তব্য লন্ডন

  • উন্নয়নশীল দেশগুলো ঘুষ, আত্মসাৎ এবং অন্যান্য দুর্নীতির কারণে বছরে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়
  • বহু দশক ধরে লন্ডনের সম্পত্তি বাজার রহস্যময় উৎসের অর্থের নিরাপদ বিনিয়োগস্থল

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং সর্বশেষ নেপালে গণবিক্ষোভের মুখে সরকার পতন হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিক্ষোভ চলছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অস্থিরতার লক্ষণ দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এসব জন অসন্তোষের পেছনে মূল কারণ ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি। দেখা যাচ্ছে, এই দুর্নীতির অর্থের বেশির ভাগই স্থানান্তর করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে।

মালয়েশিয়া, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের তদন্তকারীরা পাচারকৃত অর্থের সুরক্ষায় ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। কারণ, দেশটি বিশ্বজুড়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বহু দশক ধরে লন্ডনের সম্পত্তি বাজার রহস্যময় (উৎস অজানা) অর্থের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসেবে কাজ করছে। এখানকার বিলাসবহুল ভবনগুলো যেন বৈশ্বিক দুর্নীতির এক নীরব সাক্ষী। 

মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো যখন ন্যায়বিচার চাইছে, তখন ব্রিটেন আবারও তাকে বিশ্বের প্রধান ‘লন্ড্রোম্যাট’ (কালোটাকা সাদা করার মেশিন) হিসেবে দেখতে বাধ্য করছে।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে সংযোগ : চলতি মাসের শুরুতে মালয়েশিয়ার তদন্তকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের লন্ডনে থাকা কথিত সম্পদের তদন্ত শুরু করেছেন। মাহাথির তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই ঘোষণাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বৃহত্তর অঞ্চল থেকে সম্ভাব্য দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ সংরক্ষণে ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

গত জুনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়াত মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী দাইম জাইনুদ্দিনের সম্পদের তদন্তের অংশ হিসেবে ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে। দাইম ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই সম্পদের মধ্যে লন্ডনের সিটি এলাকার দুটি বাণিজ্যিক ভবন এবং ম্যারিলিবোন ও বেইজওয়াটারে বিলাসবহুল বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে অবৈধ অর্থের প্রবাহ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এই অবৈধ অর্থ প্রায়ই বৈধ সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে শেল কোম্পানি এবং অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে পাচার করা হয়। ফলে তাদের উৎস শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে মার্কিন কর্তৃপক্ষ অনুমান করে, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ১ এমডিবি থেকে চুরি করা ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্রিটিশ সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই অর্থ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আজমি হাসান বলেন, ‘লন্ডন বেশির ভাগ মালয়েশীয় অভিজাতদের জন্য সম্পত্তি কেনা বা রাখার প্রথম পছন্দ। যুক্তরাজ্য এবং মালয়েশিয়ার মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাদের সেখানে অর্থ রাখতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায়।’

বাংলাদেশে তদন্ত :

শুধু মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশও এই ধরনের দুর্নীতির শিকার। গত মে মাসে ইউকের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীদের মালিকানাধীন প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পরবর্তী তদন্তে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, যার মধ্যে মেফেয়ারের প্রাসাদ, সারে এস্টেট এবং মার্সিসাইডের ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এই তথ্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এই পদের দায়িত্ব দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করা। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর তাঁর আর্থিক কর্মকা- নিয়ে গভীর তদন্ত শুরু হয়েছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অনুমান করছে, হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লুট করা হয়েছে।

আইনি দুর্বলতা :

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ব্রিটেনের আইনি ব্যবস্থা এখনো তথৈবচ। যদিও ২০১৮ সাল থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মূল ভূখ-ের বাইরের অঞ্চলগুলোতে মালিকানা নিবন্ধনের জন্য আরও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাঁচটি ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি (যার মধ্যে কেম্যান আইল্যান্ডস এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস অন্তর্ভুক্ত) এখনো বৈশ্বিক অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এই অঞ্চলগুলো দিয়ে গত ৩০ বছরে ৭৯টি দেশ থেকে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের অবৈধ অর্থ পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

দুর্নীতির এই বিশাল অঙ্কের মূল্য দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) অনুমান করে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ঘুষ, আত্মসাৎ এবং অন্যান্য দুর্নীতির কারণে বছরে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়। ইউএনওডিসি সম্পদ পুনরুদ্ধার নির্দেশিকায় বলেছে, ‘এই কারণেই এই অর্থ পুনরুদ্ধার করা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

এশিয়াজুড়ে এই চিত্রটি খুবই পরিচিত। সিঙ্গাপুরে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পাচার চক্রে জড়িত ১০ চীনা নাগরিকের মধ্যে শেষ অভিযুক্তকে গত বছর জেল দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে লন্ডনের কেন্দ্রে ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তি কিনেছিলেন।

নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ এই অঞ্চলে পরিবর্তনের একটি নতুন ঢেউ নিয়ে এসেছে। লন্ডনের আকাশচুম্বী ভবনগুলো আজও ঝলমল করছে। কিন্তু এশিয়ার কোটি মানুষের কাছে এটি চুরি করা স্বপ্নের ওপর নির্মিত দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি এমন একটি ব্যবস্থার প্রতিফলন, যা এখনো ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির আওতায় আনতে লড়ে যাচ্ছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!