ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আজ এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। মহাদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে এ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের লড়াই দেখার জন্য চার দশকের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ক্রিকেট বিশ^কে। অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত ও কাক্সিক্ষত ভারত-পাকিস্তান এশিয়া কাপ ফাইনালের দেখা মিলেছে। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় দুই দলের মহারণ।
শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতই ফেভারিট। ফাইনালে ওঠার পথে পাকিস্তানকে দুবার হারায় তারা। তাদের ম্যাচ ঘিরে যে আগাম উত্তেজনা ও উত্তাপের ঝাঁজ ছড়ানোর আভাস ছিল, সেটি মাঠের লড়াইয়ে দৃশ্যায়ন হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে একপেশে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। এবার এশিয়াসেরা হওয়ার মহারণে একই দৃশ্যের অবতারণা হবে, নাকি চিত্রনাট্য বদলে নতুন গল্পের জন্ম দেবে পাকিস্তান, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
গত ১৬টি এশিয়া কাপ আসরের মধ্যে আটবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। পাঁচবার ফাইনালে খেলে দুবার জিতেছে পাকিস্তান। আজ নবম শিরোপা ঘরে তুলবে ভারতীয়রা, নাকি তৃতীয়বারের মতো এশিয়ার সেরা হবে পাকিস্তানিরা, তা ময়দানি লড়াই শেষেই দেখা যাবে। ২০০৭ সাল থেকে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল মানেই পাকিস্তানের জয়, এটি যেন নিয়ম হয়ে গেছে। তবে এবার ইতিহাস বদলানোর মিশন ভারতের। আর সালমান আলি আগাদের অনুপ্রেরণা হতে পারে ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই টুর্নামেন্টে ফাইনালের মঞ্চে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। এবার আরেকটি ফাইনাল, লড়াই হবে দুবাইয়ে। এখানেও ইতিহাস রচনা করতে চায় পাকিস্তানিরা।
এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত ও পাকিস্তানের মহারণ বাড়তি উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে গত ম্যাচগুলোতে কিছু ঘটনাপ্রবাহের কারণে। দুই দেশের বৈরী রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে খেলায়। আগের দুই ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়েরা নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া প্রথম ম্যাচের জয়টি উৎসর্গ করেছেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলায় পেহেলগ্রামের নিহত পরিবারের প্রতি সংহতি জানান। এ জন্য সূর্যকুমারকে রাজনৈতিক ব্যক্তব্য দিতে বারণ করেছে আইসিসি। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভারতীয়দের হ্যান্ডশেক না করার ঘটনাটিও বিতর্কের জন্ম দেয়। ফাইনালের আগে আগ্রাসী আচরণের জন্য আইসিসির শাস্তির মুখে পড়েন হারিস রউফ। সাহেবজাদা ফারহানকেও তলব করে আইসিসি। ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর শাস্তির ঘটনা ফাইনালের উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
ফাইনালে ওঠার পর পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগা বলেছেন, কীভাবে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিততে হয়, সেটি ভালো করেই জানা আছে তাদের। গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরে ভারতের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে হারলেও ফাইনাল ঘিরে বেশ আত্মবিশ^াসী পাকিস্তান দল। অন্যদিকে, তিন কারণে পাকিস্তানের চেয়ে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে ভারত। প্রথমত, দলটি যে অপ্রতিরোধ্য একটা রিদমে আছে, সেটিই ফাইনালে ভারতের সবচেয়ে বড় জ¦ালানি। দ্বিতীয়ত, ভারতের ব্যাটিং গভীরতা অনেক।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না হারা পর্যন্ত কেউই হার মানে না। সেখানে পাকিস্তানের মির্ডল অর্ডার এখনো প্রমাণ করতে পারেনি যে, তারা ভালো কিছু করতে জানে। তৃতীয়ত, ভারতের বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ। বুমরাহের সামনে যেকোনো ব্যাটসম্যানকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। স্পিন শক্তিতেও অসাধারণ দল ভারত। আর তাদের যে অলরাউন্ডাররা আছেন, তারা ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন যেকোনো সময়। সব মিলিয়ে ভারতের জন্য এশিয়া কাপের আরেকটি শিরোপা জেতা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।