বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

গুমের দুই মামলা আমলে

শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের  বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের  বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিও করেছেন।

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ পৃথক দুই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। দাখিল করা দুই অভিযোগেই প্রধান আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ফরমাল চার্জ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। 

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের গুম এবং গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ দুই মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) সেলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) আটক, গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।’ 

আসামিদের মধ্যে চারজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এখনো কর্মরত রয়েছেন। তবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী অভিযোগ আমলে নেওয়ায় তারা আর নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন না। প্রথম অভিযোগে র‌্যাবের টিএফআই সেলে অপহরণ, গুম, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই মামলার আসামিরা হলেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশিদ হোসেন, সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল (অব.) আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন।

অন্যদিকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার আসামিরা হলেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত খুন, হত্যাচেষ্টা, গুম, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৩৫৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১৪০টিই গুমের অভিযোগ। এসব অভিযোগের অধিকাংশই ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তারা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

‘গুম আমরা হয়েছি, সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো পরিবার’

আওয়ামী লীগের আমলে গুমের ঘটনায় দুই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিন আদালতে উপস্থিত হন হাসিনা সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান), হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক, মাইকেল চাকমাসহ কয়েকজন।

আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী বলেন, ‘বিনা অপরাধে ডিজিএফআই আমাকে প্রায় আট বছর বন্দি করে রেখেছিল। সব জুলুমের বিচার চাই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। সাবেক প্রধামন্ত্রীসহ যারা জড়িত ছিল, তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

মাইকেল চাকমা বলেন, ‘যারা আইনবহির্ভূতভাবে আমাকে সাড়ে পাঁচ বছর গুম করে রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার পাব। আর যেন বাংলাদেশে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা না ঘটে। ক্ষমতার যারা কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, তারা যেন এ বিচার দেখে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে।’

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ‘আমি আটটি বছর অন্ধকার ঘরে বন্দি ছিলাম। তখন মনে হতো সংবিধান, মানবাধিকার, আইনের শাসন এসব কোথায়! গত ১৬ বছর সংবিধানের ধারাগুলো শুধু কাগজের ওপর কালি ছিল। আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’ 

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আজকে এখানে আমার পরিবারকে নিয়ে এসেছি। একটি বিষয় জানা দরকার, গুম হয়তো আমাদের করা হয়েছে, কিন্তু ভোগান্তির শিকার হয়েছে আমাদের পরিবারগুলো। সাত মাস গুম ছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস ছিল একদিন বাংলার মাটিতে এর বিচার পাব। অপরাধীরা অনেকে পালিয়ে গেছে, অনেকে দেশে আছে। যারা দেশে আছে, আশা করছি শিগগিরই তাদের আটক করা হবে। পালিয়ে যারা গেছে, তারা যেখানে থাকেন, খুঁজে বের করা হবে।’

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক বলেন, ‘আমি একা নই, আমার পুরো পরিবার গুম হয়েছে। যারা গুম হয়েছে, শুধু তারা নয়, তাদের পুরো পরিবারও গুম হয়েছে। এটি যে কী কষ্ট, বোঝানো যাবে না। আদালতের উচিত, গুমের ঘটনায় জড়িতদের আয়নাঘরে রেখে বিচার করা।’

গুমের শিকার আরেকজন বলেন, ‘আমি সাড়ে চার মাস গুম ছিলাম। আজকে ভালো লাগছে, এই বিচার আমরা শুরু হতে দেখছি। গুম হয়তো আমরা হয়েছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা অনেক অত্যাচারের ভিতর দিয়ে গেছে। মানসিক এই অত্যাচার থেকে তাদের বের হতে অনেক কষ্টা হচ্ছে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!