এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১২২তম লেখক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি।
এ সময় সংস্থাটি বলেছে, তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন তার চিত্তাকর্ষক ও দূরদর্শী সৃজনকর্মের জন্য, যা মহাপ্রলয়ের ভয়াবহতার মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনর্ব্যক্ত করে। লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে ‘সমসাময়িক সাহিত্যজগতের অ্যাপোক্যালিপসের মাস্টার’ আখ্যা দিয়েছেন নোবেল কমিটির চেয়ার আন্দার্স ওলসন।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের জন্ম ১৯৫৪ সালে রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির একটি ছোট শহর গিউলাতে। একই রকম প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা ক্রাসনাহোরকাইয়ের প্রথম উপন্যাস ‘সাটানটাঙ্গো’ (মূল প্রকাশ: ১৯৮৫, ইংরেজি অনুবাদ: ‘ঝধঃধহঃধহমড়’, ২০১২)-এর পটভূমি। উপন্যাসটি হাঙ্গেরিতে সাহিত্যিক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এটিই ছিল লেখকের যুগান্তকারী কাজ। উপন্যাসটিতে কমিউনিস্ট ব্যবস্থার পতনের ঠিক আগে হাঙ্গেরির গ্রামাঞ্চলে একটি পরিত্যক্ত সম্মিলিত খামারের দুর্দশাগ্রস্ত বাসিন্দাদের একটি গোষ্ঠীকে শক্তিশালী ব্যঞ্জনার মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। পরিচালক বেলা টারের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালে উপন্যাসটি নিয়ে মৌলিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।
আমেরিকান সমালোচক সুসান সনট্যাগ ক্রাসনাহোরকাইকে সমসাময়িক সাহিত্যের ‘মহাপ্রলয়ের গুরু’ হিসেবে ভূষিত করেন। লেখকের দ্বিতীয় বই ‘অ্যাজ এলেনাল্লাস মেলানকোলিয়াজা’ (১৯৮৯; ইংরেজি অনুবাদ: ‘ঞযব গবষধহপযড়ষু ড়ভ জবংরংঃধহপব’, ১৯৯৮) পড়ার পরই তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন। এই উপন্যাসে, কার্পেথিয়ান উপত্যকায় অবস্থিত হাঙ্গেরির একটি ছোট শহরে চিত্রিত একটি ভয়ানক কল্পকাহিনিতে নাটকীয়তা আরও বেড়ে গেছে।
ক্রাসনাহোরকাই ১৯৭২ সালে এরকেল ফেরেঙ্ক হাই স্কুল থেকে লাতিন ভাষায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে জোসেফ আত্তিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে সেজেড বিশ্ববিদ্যালয়) আইন পড়া শুরু করলেও ১৯৭৬ সালে বুদাপেস্টের ইওটভোস লোরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন। যেখানে তিনি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত আইন পড়াশোনা চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঙ্গেরিয়ান ভাষা ও সাহিত্য পড়াশোনা করেন। ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট ক্ষমতা দখলের পর মারাইয়ের নির্বাসনের পর লেখক সান্দোর মারাইয়ের কাজ এবং অভিজ্ঞতার ওপর তার থিসিস সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া সাহিত্যে পড়াশোনা চলাকালীন, তিনি গন্ডোলাত কোনিভকিয়াডো প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করেন।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের রয়েছে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। ১৯৮৭ সালে দাদ (উঅঅউ) ফেলোশিপে তিনি প্রথম কমিউনিস্ট হাঙ্গেরির বাইরে পশ্চিম বার্লিন ভ্রমণ করেন। পূর্ব ব্লকের পতনের পর, তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্জনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯০ সালে পূর্ব এশিয়ায় তার প্রথম ভ্রমণ তার কাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে; মঙ্গোলিয়া এবং চীনে তার অভিজ্ঞতা ‘দ্য প্রিজনার অব উরগা’ এবং ‘ডিস্ট্রাকশন অ্যান্ড সরো বিনিথ দ্য হেভেনস’ বইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে তিনি ১৯৯৬, ২০০০ এবং ২০০৫ সালে কিয়োটোতে ছয় মাস কাটিয়ে দূরপ্রাচ্যের নান্দনিকতা এবং সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। যা তার লিখনশৈলী এবং বিষয়বস্তুতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লেখার সময়, তিনি ইউরোপজুড়ে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেন এবং আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন।
নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার পাবেন ক্রাসনাহোরকাই। গত বছর এ সম্মাননা পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক, কবি হান কাং।
বরাবরের মতোই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যার এবং বুধবার রসায়নের নোবেল ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৩ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার।