গাজায় যুদ্ধাবসানে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে প্রথম ধাপের সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার’ কিছু অংশে দুই পক্ষ সম্মত জানানোয় ট্রাম্পসহ মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার মিসরের শারম আল-শেখে কুয়েত, কাতার, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েক দেশের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এ চুক্তির আওতায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের কাছে জিম্মি থাকা জীবিতদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা দ-প্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের এই প্রত্যাশিত চুক্তি হওয়ায় স্বস্তি নেমেছে ফিলিস্তিনপন্থিদের মনে। ইহুদি সমর্থকরাও জিম্মি মুক্তির খবরে আপ্লুত। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘আমি এই সুযোগে ঘোষণা করতে চাই, আমি ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রার্থিতায় সই করব।
আন্তর্জাতিক শান্তিতে তার অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এই নোবেলের যোগ্য প্রার্থী।’ ট্রাম্পের এই বিশেষ মিত্র বলেন, ‘অন্য যেকোনো নেতা যদি এমন সাফল্য অর্জন করতেন, তাহলে অনেক আগেই এই পুরস্কার পেতেন।’ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে বার্তা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হবে। এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে।’ ইসরায়েল-হামাসসহ গাজা যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিস্তৃত ও স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘এই অগ্রগতি গাজায় বহু মাসের অসহনীয় দুর্ভোগ ও ধ্বংসের পর একটুখানি আশার আলো।’
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অটল প্রত্যয়কে স্বাগত জানিয়েছে ঐতিহাসিক মিত্র জাপান। জাপানের পার্লামেন্টের প্রধান সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, “সব পক্ষের মধ্যে ‘প্রথম ধাপ’ নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, জাপান তাকে স্বাগত জানায়। এই চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” হায়াশি জানান, টোকিও গাজায় মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনেও সহায়তা করবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবেনিজ এক বার্তায় বলেন, ‘গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণাকে অস্ট্রেলিয়া স্বাগত জানায়। দুই বছরের সহিংসতা, দুই শতাধিক জিম্মিকে যুদ্ধাবস্থার সম্মুখীন করা ও লাখো বেসামরিক প্রাণহানির পর এই চুক্তি অত্যন্ত জরুরি ছিল।’ চুক্তির আওতায় হামাসকে ভবিষ্যতে গাজা শাসনে ‘নিষিদ্ধ’ করার বিষয়েও জোরালো সমর্থন দেন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া একটি ন্যায্য ও স্থায়ী দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সব সময় কাজ করে যাবে।’
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বস্তি জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও। তিনি বলেন, ‘গাজায় শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপে দুই পক্ষের সম্মতি মেলার সংবাদ বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে জিম্মি ও গাজার সাধারণ মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক স্বস্তির মুহূর্ত।’ এই চুক্তি বাস্তবায়নে যেন কালক্ষেপণ না হয় এবং অবিলম্বে যেন গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়, সে প্রত্যাশা জানান তিনি। ‘যুক্তরাজ্যের জনগণ বরাবরই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে অটল সমর্থক’, দৃঢ় বার্তা দেন কিয়ার স্টারমার। গাজায় যুদ্ধবিরতির খবরে বিবৃতি দিয়েছে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা)।
এক এক্স পোস্টে তারা বলেছে, ‘গাজায় দুই বছরের সহিংসতার পর অবশেষে জিম্মিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে এবং ইসরায়েলি সেনারা চুক্তির আওতায় নির্ধারিত সীমারেখার পেছনে সরে যাবে। আমরা আশা করি, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে গাজায় একটি স্থায়ী শান্তির পথ খুলে দেবে।’ ‘হামাসকে অবশ্যই সব জিম্মি মুক্তি দিতে হবে এবং ইসরায়েলকে নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যেতে হবে।
এটাই দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে প্রথম ধাপ’ বলে বার্তা দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স। নিউজিল্যান্ডের শান্তিপ্রিয় জনগণ গাজাবাসী এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের পাশে আছে বলেও জানান তিনি। গাজায় যুদ্ধবিরতির খবরকে স্থায়ী শান্তির ‘দরজা’ হিসেবে দেখছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তিকে আমি স্বাগত জানাই।