ঢাকা শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

তহবিলসংকটে শান্তি মিশনে কাটছাঁট, শঙ্কায় বাংলাদেশ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ১১:২৬ পিএম
  • বিশ্বব্যাপী ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের
  • ৫২৩০ শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাপী ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। এ সময় প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ অর্থের ঘাটতি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তহবিলের অনিশ্চয়তা। জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আর জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশও।

ওই কর্মকর্তা জানান, মোট প্রায় ২৫ শতাংশ শান্তিরক্ষী সেনা ও পুলিশ সদস্যকে তাদের সরঞ্জামসহ প্রত্যাহার করা হবে। পাশাপাশি এসব মিশনে কাজ করা অনেক বেসামরিক কর্মীও এর আওতায় পড়বেন। ফলে ১৩ থেকে ১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য এবং উল্লেখযোগ্য বেসামরিক কর্মী এই ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বেন।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় তহবিলদাতা হচ্ছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র মোট তহবিলের ২৬ শতাংশের বেশি দিয়ে থাকে। চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম তহবিলদাতা এবং প্রায় ২৪ শতাংশ সহায়তা দিয়ে থাকে। এই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবী নয়, নির্ধারিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে। নতুন বকেয়া যোগ হওয়ায় বর্তমানে মোট বকেয়ার পরিমাণ ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। জাতিসংঘ সূত্র জানিয়েছে, নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই দেশটির ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল, যার সঙ্গে এখন আরও ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ৬৮০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে, তবে দেশটির জাতিসংঘ মিশন এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার শান্তিরক্ষা তহবিল বাতিল করেন। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের বাজেট অফিস ২০২৬ সালের জন্যও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের তহবিল বাতিলের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবের পেছনে কারণ হিসেবে মালি, লেবানন ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অভিযানের ব্যর্থতাকে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ছাঁটাইয়ের ফলে সাউথ সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লেবানন, কসোভো, সাইপ্রাস, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সাহারা, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে গোলান উচ্চভূমি এলাকা এবং আবিইÑ দক্ষিণ সুদান ও সুদানের যৌথ প্রশাসিত এলাকায় শান্তি রক্ষা মিশনে প্রভাব পড়বে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সংস্থার কার্যকারিতা বাড়ানো এবং খরচ কমানোর উপায় খুঁজছেন। এ বছর সংস্থার ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তারা অর্থসংকটের মুখোমুখি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ছাঁটাই শান্তিরক্ষা অভিযানের কার্যকারিতা ও শান্তি রক্ষার প্রভাবকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সমালোচকেরা যুক্তরাষ্ট্রের একপক্ষীয় সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষার উদ্যোগে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। এদিকে জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েনের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল নেপাল। এ সময় মিশনে নেপালের মোট শান্তিরক্ষী ছিল ৬০১ নারীসহ ৫ হাজার ৩৫০ জন। বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪৭ নারীসহ ৫ হাজার ২৩০ শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ৬৬০ নারীসহ ৫ হাজার ২৩৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে রুয়ান্ডা।

১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া শুরু। এরপর ৩৭ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী এই মিশনে দায়িত্ব পালন করছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা এই মিশনে অংশ নিচ্ছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। ওই বছর নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয়।