রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডাকা কর্মী সমাবেশ ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনায় পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় দলটি তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, পুলিশের এমন আচরণ নব্য ফ্যাসিবাদের আলামত। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য পুলিশকে জাপার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
পুলিশের ভাষ্যমতে, মৌখিকভাবে জাতীয় পার্টিকে বলা হয়েছিল রাস্তা দখল না করে কর্মসূচি পালন করতে। কিন্তু তারা রাস্তার ওপর চেয়ার বসিয়ে মঞ্চ স্থাপন করে। কয়েকবার তাদের সতর্ক করার পরও শোনেনি। অন্যদিকে দলটির দাবি সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে সমাবেশ ভ-ুল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এমনটা করেছে।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ‘কর্মী সমাবেশ’ করছিল দলটি। এর আগে ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে শুরু হওয়া কর্মী সমাবেশে উপস্থিত হন জি এম কাদের, মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ দলটির নেতারা। দুপুরের পর থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়া সমাবেশকে ঘিরে আগেই মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা করার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল ছেড়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা কাকরাইলের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছুড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় দেখা যায় কার্যালয়ের ফটক বন্ধ। সামনে পুলিশ অবস্থান করছে। সমাবেশের জন্য আনা চেয়ার-টেবিল সরিয়ে নিচ্ছেন ডেকোরেশনের লোকজন।
ঘটনার জেরে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ছিল। সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে সমাবেশ ভ-ুল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এমনটা করেছে। পুলিশের সংযত আচরণ করা উচিত ছিল। আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ যেভাবে পেছন থেকে আক্রমণ করেছে, পানি ছিটিয়েছে, তাতে পদদলিত হয়ে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পুলিশ দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। আমরা পুলিশের এমন আচরণে নব্য ফ্যাসিবাদের আলামত দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি মনে করেন, জাতীয় পার্টির সমাবেশ ভ-ুলের ঘটনায় পুলিশকে ক্ষমা চাওয়া উচিত। একই সাথে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা বজায় রাখতে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা তাদের সমাবেশ করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা সমাবেশ শুরু করে। সমাবেশ ঘিরে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি ছোট করে সমাবেশ করত তাও কথা ছিল। হুট করে রাস্তা বন্ধ করে মঞ্চ বানিয়ে অনেক চেয়ার বিছিয়ে তারা বড় সমাবেশ করছিল না জানিয়ে। এর মধ্যে আবার দুইটা গ্রুপ। তাই সাউন্ড গ্রেন্ডেড নিক্ষেপ করা হয়েছে সরে যেতে।’
এদিকে, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ‘কর্মী সমাবেশ’ করছিল দলটি। এর আগে ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে শুরু হওয়া কর্মী সমাবেশে উপস্থিত হন জি এম কাদের, মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ দলটির নেতারা। এদিন দুপুরের পর থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়া সমাবেশকে ঘিরে আগেই মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।
জাতীয় তরুণ পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, সারা দেশের জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের বক্তব্য এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার জন্য কর্মীরা সমাবেশে এসেছিল। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও চেয়ারম্যানের বক্তব্যের ঠিক আগ মূহূর্তে হঠাৎ করে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দিকে চলে যায়।’ ঢাকা নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান শোভন বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এসেছি, এখানে সমাবেশ চলছিল। হঠাৎ টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপের কারণে আমরা বিভিন্ন দিকে চলে যাই। আমাদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে নেতাকর্মীরা নিরাপত্তা দিয়ে অফিসে নিয়ে যায়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন