ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন দুদক চেয়ারম্যান

লিখিত অভিযোগ পেলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানেরও তদন্ত হবে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সাবেক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং সাবেক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক খানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), যার প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি দুদকে। তাদের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন কর্মকর্তার একটি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্তাধীন মামলার আসামির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রাজউক প্লট বরাদ্দ নেওয়া, বড় দুটি টেলিকম অপারেটরের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া, অর্জিত অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে একাধিক বাড়ি নির্মাণ করার অভিযোগ পেয়েছে সংস্থাটি।

কিন্তু অভিযুক্ত দুই কমিশনারের শীর্ষ কর্মকর্তা সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কেন এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কানে এসেছে। কিন্তু কেউ এখনো লিখিত আকারে দেয়নি। তাই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। যে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছি। সে যদি দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানও হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষমতায় বসে আস্ফালন করুক, তা আমরা চাই না। সে যে কেউই হোক না কেন’

দুদকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে দুদকের কোনো সাবেক বা বর্তমান কমিশনারকে দুর্নীতি বা অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধানের মুখোমুখি হতে হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সাবেক কমিশনার জহুরুলের পাসপোর্ট বাতিল করে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করে, যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধেই দুদক অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই সংস্থাটি নিরপেক্ষ ছিল না। আর তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে। ৫ আগস্টের পর দুদক দুটি আঙ্গিকে প্রমাণ দিয়েছে যে, তারা ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতার পাশাপাশি থাকা ব্যক্তিদের ধরতে অক্ষম।

একটি হলো, টিআইবি থেকে তাদের কাজে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ দিলেও দুদক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর তারা ক্ষমতার বাইরে গেলে আড়াই মাসে দুইশর কাছাকাছি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অন্যদিকে তারা যে পক্ষকে মনে করেছে, যে তারা ক্ষমতায় আছে বা আসতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটি কোন প্রক্রিয়ায় নিয়েছে, সেটিও নিশ্চিত নয়। তাই আমরা বলেছি, দলীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত বা সুবিধাভোগী আমলাকে দুদকের ঊর্ধ্বতন হিসেবে নিয়োগ দিলে দুদক শক্তিশালী হবে না। সাবেক চেয়ারম্যানের আমলে যেসব দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্ত অবশ্যই হওয়া উচিত। কমিশনারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান কার্যক্রমেই থেমে থাকলে চলবে না।’