ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি

জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:১২ এএম

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নিবন্ধিত দল জোটগতভাবে অংশ নিলেও নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। এমন বিধান রেখেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ২০২৫ (আরপিও) জারি করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। গত সোমবার আইন মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশের গেজেট জারি হয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একগুচ্ছ সংশোধন আনা হয়েছে আরপিওতে।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। এরপর জোটের প্রতীকের সংশ্লিষ্ট ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে বিএনপি আপত্তি তুললেও জামায়াত ও এনসিপি সংশোধন বহাল রাখার দাবি তুলে। অবশেষে জোট করলেও ভোট করতে হবে স্ব স্ব দলের প্রতীকেÑ এমন বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি হলো। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক নিবন্ধিত দল জোট করলেও জোট মনোনীত প্রার্থী বড় দলের বা অন্য দলের প্রতীকে ভোট করতে পারবেন না। নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বেশ কয়েকটি বিধান নতুন যোগ হয়েছে এবং কয়েকটি বিধান আবার ফিরে এসেছে। এগুলোর মধ্যে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি ভোট করতে পারবেন নাÑ এমন বিধান যোগ হয়েছে। আর ফিরে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী এবং ‘না’ ভোট ব্যবস্থা।

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারির মধ্যে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কারকাজ শেষ হলো। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি। এবার এই সংশোধিত আরপিও ধরে শিগগির নির্বাচনে দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আরপিওতে আরও যেসব বিধান করা হয়েছেÑ সমান সংখ্যক ভোট পেলে পুনভোট হবে, জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য (ভোটে অযোগ্য এমন) দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে। তারা তালিকা করে কমিশনের অনুমোদন নেবেন।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদধারী প্রার্থী হতে পারবেন না। কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আরপিওতে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদে থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না।

রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশে ক্ষুব্ধ হলে প্রার্থী বা ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও আপিল করার সুযোগ পাবে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।

নির্বাচনি এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হতে হবে। ‘ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিধান’ বিলুপ্ত করা হয়েছে। প্রবাসী, নির্বাচনি এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাগারে বা হেফাজতে থাকা ব্যক্তি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।

ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট করা যাবে। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল। ভোটার প্রতি ব্যয় সর্বোচ্চ ১০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। তবে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার বেশি হওয়া যাবে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দ-ের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের পাশাপাশি ইসির ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ব্যবস্থা নিতে পারবেনÑ এমন বিধানও রাখা হয়েছে।