ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা

ফাঁকা ৬৩ আসনের প্রায় ৫০টি পাচ্ছেন শরিক দলের নেতারা

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:২০ এএম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর প্রতি রাজনৈতিক সম্মান জানিয়ে ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে। এসব আসনে দলটি প্রার্থী না দিয়ে শরিক ও সমমনাদের জন্য অন্তত ৪৫ থেকে ৫০টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি আসনগুলোয় দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেন এবং ৬৩টি আসন শরিক ও সহযোগী দলের জন্য খালি রাখার ঘোষণা দেন।

দলীয় সূত্র বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদারÑ গণফোরাম, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় দল (বিজেডি), জেএসডি, খেলাফত মজলিসসহ অন্তত ১২টি দলের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হয়েছে বা আলোচনাধীন। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনসিপিকেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

সূত্র মতে, ৪৫ থেকে ৫০ আসন পেতে পারেন শরিকরা। এ ছাড়া ফাঁকা থাকা ঢাকার ৭টি এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, বিজেপি, এনডিএম ও খেলাফত মজলিসকে দেওয়া হতে পারে। বাকি ১৫ আসনে বিএনপি নেতারা মনোনয়ন পেতে পারেন। এসব আসনে সীমানা জটিলতা ও একাধিক হেভিওয়েট দলীয় প্রার্থী থাকায় ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পর সারা দেশে নির্বাচনি আমেজ বইছে। সেই আমেজে নতুন রাজনৈতিক চমক হিসেবে যুগপৎ শরিকদের জন্য আসন ছাড়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

দলীয় একাধিক সূত্র মতে, ছেড়ে দেওয়া আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী আছেন বিধায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি দলের নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য তারা অধিকাংশ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য রেখে দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সময় বলেন, ‘এ প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হতে পারে। তা ছাড়া কিছু আসন রাখা হয়েছে আন্দোলনের জোট শরিকদের জন্য।’ প্রার্থী ঘোষণা না করা আসনগুলো হলো : ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-১ ও ৩, লালমনিরহাট-২, বগুড়া-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১, ঝিনাইদহ-১, ২ ও ৪, যশোর-৫, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২ ও ৩, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪ ও ১০, কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ২০, গাজীপুর-১ ও ৬, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২, সুনামগঞ্জ-২ ও ৪, সিলেট-৪ ও ৫, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৬, কুমিল্লা-২ ও ৭, লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং কক্সবাজার-২।

শরিকদের জন্য নতুন চমক বিএনপির: দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণফোরাম জন্য ছাড় দিতে পারে ঢাকা-৭ ও নরসিংদী-৩ আসন। যেখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিক। এদিকে ঢাকা-৭ আসন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হককে দেওয়া হতে পারে, এমন আলোচনাও আছে। তিনি ঢাকায় নির্বাচন না করে বাগেরহাট-১ আসন থেকেও ভোটে অংশ নিতে পারেন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে পটুয়াখালী-৩ আসনই দেওয়া হচ্ছে। ঝিনাইদহ-২ পাচ্ছেন তারই দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।  দুইটি আসন ছাড়ের সবুজ সংকেত পেয়েছে এলডিপিও।  সে হিসেবে, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে প্রার্থী হতে পারে দলের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বা তার ছেলে ওমর ফারুক। এ ছাড়া কুমিল্লা-৭ আসনে লড়বেন দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ। পিরোজপুর-১ আসনে সবুজ সংকেত পেয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদাকে ছাড় দেওয়ার কথাও জানা গেছে বিএনপি সূত্রে। ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের পেছনে ফেলে সবুজ সংকেত পেতে পারেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। 

এদিকে, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে লড়তে পারেন জেএসডির আসম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। খালি আছে ঝালকাঠি ১ আসনও। একইভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিবের জন্য খালি আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন।

ঢাকার অন্তত কয়েকটি আসন এনসিপির: দলের একটি বিশেষ সূত্র জানায়, জোট ও আসন বণ্টনের হিসাব-নিকাশ এখনো শেষ হয়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির আলোচনা চলছে।  তাদের এখন পর্যন্ত আটটি আসন ছাড় দিতে রাজি হয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকার অন্তত কয়েকটি আসন রয়েছে। এনসিপি এককভাবে নির্বাচন করলে দলের শীর্ষ নেতারা বেশ কিছু আসন ধরে কাজ করছেন। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ডা. তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্থা শারমিনসহ দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা এবং আশপাশের কয়েকটি আসন থেকে লড়বেন।

এ ছাড়া দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর, সারজিস আলম পঞ্চগড়, হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের জন্য দলীয় পদ এবং সংসদীয় আসনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। এদিকে ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা) আসনে প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।  সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির দায়িত্বশীলরা। এ ছাড়া জানা গেছে, ঢাকা-৯-তে তাসনিম জারা, ঢাকা-১৮ নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, কুমিল্লা-৪ আসনে হাসনাত আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কিছু আসন বিগত দিনের শরিক দলদের সমর্থনের জন্য রেখে দিয়েছি, যেটা তাদের আলাদা সম্মান। আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যেসব আসনে তারা আগ্রহী, সে আসনগুলোতে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি আপাতত  দেবও না। আমরা আশা করছি, তারা তাদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা সব কিছু চূড়ান্ত করব।’

জানতে চাইলে বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ১৬ বছর পর সারা দেশে বইছে নির্বাচনি আমেজ। এর মধ্যে প্রার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে শরিকদের জন্য নতুন চমক জুগিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য নতুন কিছু আগেই ভেবে রেখেছে। তবে এটা আমাদের সম্ভাব্য তালিকা। এখানে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক দল আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কোনো কোনো আসনে পরিবর্তন আনতে পারি এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত, যা পরে জানানো হবে।