সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আদালত হস্তক্ষেপ করছেন, এটি কাম্য নয়। কারণ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তাই বিষয়টি তাদের এখতিয়ারেই থাকা উচিত। অতীতের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন জাতি মেনে নেবে না। আর নির্বাচনে সবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা উচিত।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি কার্যালয়ে আয়োজিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সংলাপে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন ছয়টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কারো পক্ষে কাজ করবে না।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ অন্যান্য সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা আলাদা আলাদা করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গণভোট যেন শেষ পর্যন্ত হাস্যকর কিছুতে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে ইসিসহ সংশ্লিষ্টদের লক্ষ রাখতে হবে।’ তিনি নির্বাচনে সব দলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। এবার সেটা হলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর জনগণের ভোট দেওয়ার পরিবেশ ছিল না। আসন্ন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে এখনো প্রতিনিয়ত আস্থাহীনতা কাজ করছে। কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চায় যেনতেনভাবে। এমনটি হলে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়বে। এ জন্য কমিশনকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্ট শক্তির সহায়তায় একটি চক্র আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করেছিল। আমাদের নেতাদের জেলে দেওয়া হয়। আর তারা ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে ছিল। অথচ আজ তারা এখানে এসে আমাদের আসন দখল করেছে।’
গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আকমল হোসেন বলেন, ‘অতীতে তিনটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এবার মানুষ উৎসবমুখর ভোটে শামিল হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।’ এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ পরিহারের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব শাহ মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশের মানুষ হতাশ হবে। তাই কমিশনকে নির্বাচন বিতর্কিত করার যেকোনো অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।’
এ সময় সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য জাতি ও জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশন ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। কমিশন কারো পক্ষে কাজ না করে বিবেক, দেশের প্রচলিত আইন, বিধি ও বিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, তার পক্ষে কাজ করলে আমরা নিরপেক্ষ। কিন্তু আমরা কারো পক্ষে কাজ করতে পারব না। আমাদের বিবেক দেশের প্রচলিত আইন বিধিবিধান, যা বলে সেটা মেনেই আমরা চলব, ইনশাল্লাহ।’
সংলাপ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের এখানে আমন্ত্রণ জানানোর মূল পারপাস দুইটা। একটা হলো, আমরা যে একটা আচরণবিধি বানিয়েছি, তা পরিপালনে আপনাদের সহযোগিতা চাওয়া। আর একটা হলো, একটা সুন্দর নির্বাচনের কথা আমরা সবাই বলছি এবং একটা নিরপেক্ষ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য জাতির কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আপনাদের সহযোগিতা চাওয়া আমাদের বড় উদ্দেশ্য।’
সিইসির মতে, নির্বাচন সংস্কার কমিশন এবং ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন অংশীদার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ইসির কাজ কিছুটা হালকা করে দিয়েছে।
জাতীয় নেতাদের ব্যস্ততা ও ইসির অভ্যন্তরীণ কাজের চাপ মিলিয়ে কিছুটা দেরিতে সংলাপ শুরু হয়েছে মন্তব্য করে সিইসি আশা প্রকাশ করে বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে কনসালটেশনের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করা যাবে। বর্তমান কমিশনের সামনে থাকা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এআই ব্যবহার করে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ ছড়ানোকে চিহ্নিত করেছেন সিইসি। ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, চাপে ‘নতজানু হবে না’ ইসি : অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে ইসি কোনো চাপের মুখে নতজানু হবেন না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ইসির সামনে ভালো নির্বাচন করার বিকল্প রাস্তা নেই বলেও জানান তিনি।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার করছি। আমাদের সামনে ভালো নির্বাচন করার বিকল্প রাস্তা নেই।’ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো যেন আগে থেকেই এক্সারসাইজ করে, তাহলে ভালো হবে।’ এ জন্য পোলিং এজেন্ট নিয়োগ বিষয়ে ভোটের আগের দিন চূড়ান্ত না করে আগেভাগে তালিকা করার আহ্বানও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন