ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

নাশকতার আশঙ্কায় দেশজুড়ে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হয় গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার পরও সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেন নিষিদ্ধ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।  বৃহস্পতিবারই নির্ধারিত হয় আজ সোমবার শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে শাটডাউন কর্মসূচির ডাক দিয়ে দেশ অচল করার ঘোষণা দিয়েছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাশকতা-নৈরাজ্য মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে  নাশকতা-নৈরাজ্য মোকাবিলায় ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরে মাঠে নেমেছে বিজিবি। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, আগুন-ককটেল হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ দেওয়া আছে।

এদিকে শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে দেশজুড়ে নৈরাজ্য-নাশকতার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাটডাউন কর্মসূচি নিয়ে দেশজুড়ে নৈরাজ্য-নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। শেখ হাসিনার রায় ঘিরে মাঠে নামার চেষ্টায় রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে এসব নৈরাজ্য প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশ গতকাল থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা আছে। সেই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম। এর মধ্যেই দেশবিরোধী আপরাধে যুক্ত থাকায় ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে প্রায় ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সতর্ক রয়েছেন বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা গোপালগঞ্জ ফরিদপুর মাদারীপুরে বিজিবি মোতায়েন :

ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরের সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল  রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। বিজিবি সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেদিন ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। আজ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অনলাইনে আবার কর্মসূচির কথা বলছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

আগুন-ককটেল হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের : এদিকে জানমালের ঝুঁকি তৈরি হয় এমনভাবে কেউ যদি গাড়িতে আগুন দিতে বা ককটেল নিক্ষেপ করতে উদ্যত হয়, তাহলে পুলিশকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ আলী। গতকাল রোববার দুপুরে ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি কমিশনার নিজেই। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এমন নির্দেশই দিয়েছি। কেউ যদি বাসে আগুন দেয় বা ককটেল ছোড়ে এবং পুলিশকে আক্রমণ করে, তাহলে তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে?’

আওয়ামী লীগের ৪৪ নেতাকর্মী আটক :

কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কার্যক্রমে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে গতবার রোববার ৮টার মধ্যে তাদের আটক করা হয় বলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদে নগরীর টমছম ব্রিজ, বাদুরতলা ও ধর্মসাগরপাড় এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে এবং ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সংঘবদ্ধ অবস্থায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের আরও ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।  প্রত্যাক্ষদর্শীরা বলছেন, সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল ও নাশকতারর জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে হঠাৎ পুলিশের অভিযান শুরু হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেন, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঝটিকা মিছিল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই। টমছম ব্রিজ, বাদুরতলা ও ধর্মসাগরপাড় এলাকায় সন্দেহজনকভাবে অবস্থান নেওয়ার সময় ২৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বাঁশের লাঠিসহ নাশকতার পরিকল্পনার বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া গেছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নাশকতার প্রস্তুতিসহ একাধিক ধারায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ বলেন, আটকদের কাছ থেকে ব্যানার, লাঠিসহ নাশকতার বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

রাজধানীতে ৩ বাসে অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন স্থানে হাতবোমার বিস্ফোরণ: রাজধানীর হাজারীবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও সাভারে তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেট্রো স্টেশনের নিচে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাজধানীর জুরাইনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জুরাইন রেলগেট-সংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ওয়াক্ফ ভবনের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় এক পথচারী আহত হয়েছেন।  গতকাল রোববার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

শনিবার রাত থেকে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত এসব ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, শনিবার রাতে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সরকারি কলেজের সামনে পার্কিং করে রাখা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও জানান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ডে রাত সোয়া ৩টার দিকে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে এবং সাভারের রাজ ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে ভোর পৌনে ৪টার দিকে ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগানো হয়। তবে কারা এসব অগ্নিসংযোগ করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার আগে শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর হাতিরঝিলের মধুবাগ এলাকায় একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে গেলেও দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। একই রাতে আগারগাঁওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কার্যালয়ের সামনে রাত ৮টা ২০ মিনিটে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আরেকটি বিস্ফোরণের ঘটনা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। হাতিরঝিল ও শাহবাগ থানার পুলিশ জানিয়েছে, আগারগাঁওয়ের দুটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

নিউ ইস্কাটন রোডে ককটেল বিস্ফোরণে পথচারী আহত :

রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ওয়াক্ফ ভবনের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় এক পথচারী আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত আবদুল বাসির (৫০) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আবদুল বাসিরের পা ও হাত জখম হয়েছে।

সব ধরনের গাড়ি চলবেÑ শ্রমিক ফেডারেশন :

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউনে সারা দেশে সব ধরনের গাড়ি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল রোববার রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান এ ঘোষণা দেন। হুমায়ূন কবির খান বলেন, সোমবার সারা দেশে সব ধরনের গাড়ি চলবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা তা প্রতিহত করব। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কাজ করছে, আর যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এসব লকডাউন, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিক ও গাড়ির মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানান।

দেশজুড়ে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী :

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিবহনসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান। শাটডাউনে নাশকতা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। এরই মধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হয়েছে তৎপরতা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে চোখ রাখছে সব থানার পুলিশ ও ডিবির টিম। ডিএমপির আট বিভাগের প্রায় ২০০ পয়েন্টকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি বিভাগের ডিসিদের তদারকিতে এই নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে মাঠে নামার চেষ্টায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। দেশজুড়ে নৈরাজ্য-নাশকতার শঙ্কায় নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে সারা দেশ। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, মাঠে সংস্থাটি কাজ করছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট স্থাপনের কাজ চলছে।’

গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আসামি ৯১০ :

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচির ঘটনায় সদরে দুটি, কোটালীপাড়ায় একটি ও কাশিয়ানীতে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই চার মামলায় ২০০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৯১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম।

তিনি জানান, গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই মামলায় গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে শেখ নাইমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ১০০ জনের নাম উল্লেখসহ দুটি মামলায় মোট ৫৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, কোটালীপাড়া থানায় দায়ের করা মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪০ জনসহ মোট ৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  জানান, ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ ২৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।