আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি (জাপা)। এককভাবে সম্ভব না হলেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে জানিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে একক না হলেও, বিএনপি অথবা জামায়াতের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোটে যাবে তারা। তবে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে দোসর তকমা অর্জনের মাধ্যমে, অন্য সব দলের বিরাগভাজনে পরিণত হয়েছে দলটি। সরকার এবং রাজনৈতিক দল কোনো স্থান থেকেই গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছে না জাপা। এদিকে জাপাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়াসহ নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে গণঅধিকার, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের দাবি, জাপা নির্বাচনে সুযোগ গেলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারও ফিরে আসবে। জাপার দাবি, তাদের ছাড়া নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিদ্ধান্ত জনগণের রায়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া যৌক্তিক হবে। একই সাথে ফ্যাসিস্টের সঙ্গে জড়িত সবাইকে তাদের কর্মকা-ের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও এবারের নির্বাচনে এখনো অনিশ্চিত জাপা। তবে অনুমতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনি প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি। দলটি বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মেলে, তাহলে জোরেশোরে মাঠে নামবে তারা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে এককভাবে নয়, বরং জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তারা। দলের দুই অংশের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রয়োজনে তারা বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর যেকোনো একটি দলের সঙ্গে জোটে যেতেও আগ্রহী। জাপার নেতারা মনে করছেন, তপশিল ঘোষণার পর পরই তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে যে ধোঁয়াশা রয়েছে তা কেটে যাবে।
আসন্ন নির্বাচনে জাপার অবস্থানের বিষয়ে দলের একাংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী রূপালী বংলাদেশকে বলেন, জাপা নির্বাচনমুখী দল। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি হলে জাপা অংশ নিতে প্রস্তুত। জোটের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও পার্টির আসন সংখ্যা বাড়বে, একইসাথে যে দলের সঙ্গে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশল নির্ধারণে করণীয় ও সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে পার্টির আর একাংশের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিগত দীর্ঘ বছর জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সেই জায়গা থেকে জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করতে চায়। তবে কোন প্রক্রিয়ায় বা কোন কৌশলে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে, সেটি আরও কিছুটা সময় পর জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
এদিকে জাপার ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত রংপুরেও প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে মাঠ গোছানোর কাজ চলমান বলে জানান দলের একাধিক নেতা। এ বিষয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমরা নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারা সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চান। একই সঙ্গে বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। নির্বাচনের পরিস্থিতি বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে দলের সর্মথনে অভ্যন্তরীণ কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। একই চিত্র রংপুর বিভাগের অন্যান্য আসনে।
জাপার নেতারা বলছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে এখনো যে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে সেটি হয়তো তপশিল ঘোষণার পর কেটে যাবে। তখন জোটের বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবে দলটি। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করলেও সেখানে এখনো আমন্ত্রণ পায়নি দলটি। আমন্ত্রণ যেন না পায় সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছে অনেকগুলো দল।
উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের মতো কার্যক্রম নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন স্থগিত না হলেও রাজনীতির মাঠে গত ১৪ মাস ধরে অনেকটাই কোণঠাসা জাতীয় পার্টি। অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একটি মাত্র বৈঠকে অংশ নিলেও পরে ঐকমত্য কমিশন কিংবা সরকারের সাথে কোনো ধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি দলটি। সরকার যেহেতু দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেনি কিংবা নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন বাতিল করেনি; সে কারণে নির্বাচনের বিষয়ে এখনো তারা আশাবাদী। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে দলটি।

