মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

‘আর যেন আমার মতো কোনো মায়ের বুক খালি না হয়’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

‘আর যেন আমার মতো কোনো মায়ের বুক খালি না হয়’

  • ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি শহিদ পরিবারের
  • শুধু রায় ঘোষণা করেই যেন দায় শেষ না হয় : আবু সাঈদের বাবা মকবুল
  • রায় কার্যকরের আগ পর্যন্ত প্রোপাগান্ডা চালাবে দোসররা : স্নিগ্ধ

ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা তো কোনো দিন পূরণ হবে না। আর যেন আমার মতো কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-ের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। গতকাল সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনটি অপরাধের পৃথক অভিযোগে তাকে এই দ- দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও দুটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদ- দেওয়া হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জুলাই শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা। তারা রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এদিন রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের ফটকসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্লাস প্রকাশ করেন শহিদ ও আহতদের স্বজনরা।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, শুধু শেখ হাসিনার বিচার হলে হবে নাÑ যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবার ফাঁসি চাই। আমি একজন মা, আজ বুঝতে পারছি সন্তান হারানোর কষ্ট।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া প্রথম রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহিদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী তার পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির কথা জানান। রমজান আলী বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। তবে রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় সে জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করেই যেন শেষ না হয়। দ-প্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাই। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা তো কোনো দিন পূরণ হবে না। আর যেন আমার মতো কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই আন্দোলনে শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘যে রায় হয়েছে, সেই রায়ের মাধ্যমে শহিদ এবং আহত পরিবার সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়নি। আমাদের ৩ নম্বর যিনি আসামি ছিল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের যে রায়টি হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদ-, সেই রায়ে শহিদ পরিবার এবং আহত পরিবার সন্তুষ্ট হয়নি। মীর স্নিগ্ধ বলেন, ‘যদিও সে রাজসাক্ষী, তার সেই প্রিভিলেজ দেখিয়ে তাকে এই রায়টি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, সে রাজসাক্ষী হলেও তাকে অন্ততপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া উচিত ছিল। তার মৃত্যুদ- হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য তাকে যে প্রিভিলেজটি দেওয়া হয়েছেÑ সেটি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- পর্যন্ত দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি কোর্ট বিবেচনায় নেয়নি। এর জন্য শহিদ এবং আহত পরিবার সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট নয়।

মীর স্নিগ্ধ বলেন, ‘এই রায়ের আসলে কোনো মূল্য নেই, যদি শেখ হাসিনা এবং সাবেক খুনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেশের মাটিতে নিয়ে এসে এই রায়টি কার্যকর না করা হয়। যত দিন না পর্যন্ত এই রায়টি কার্যকর না করা হবে, তত দিন পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাহিনীর যারা আছে, তাদের দোসররা আছে, তারা বহাল তবিয়তে এ দেশের মাটিতে ঘুরে যাবে এবং বিভিন্ন রকম প্রোপাগান্ডা করে যাবে। তাই বাংলাদেশের সরকারের কাছে এবং যারা সংশ্লিষ্ট আছে, তাদের সবার কাছে শহিদ এবং আহতদের পক্ষ থেকে একটাই রিকোয়েস্ট, যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাদের যে রায়টি হয়েছে, সেটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা।’

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিজুড়ে মিছিল, মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করে ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা বলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর একবার মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আরেকবার মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে, এটাই ইতিহাস। জুলাই আহতরা বলেনÑ ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর সারা দেশে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আবার সারা দেশে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে। এটাই ছাত্র-জনতার ইতিহাস। আমাদের অনেক খুশি লাগছে। আমাদের যেসব ভাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মা আজ শান্তি পাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানাই।’ তারা দাবি করেন, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রায় বাস্তবায়ন করা হোক। বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও বিভাগে হাজার হাজার হাসিনা রয়েছে। তাদেরও বিচার করা হোক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও হাসিনার প্রেতাত্মারা আছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। এই রায় পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। এটি প্রমাণ করেÑ জালিম যত জুলুম করুক না কেন, তার পরিণতি এ রকমই হয়।

জুলাই আন্দোলনে নিহত যুবক মিরাজ হোসেনের বাবা আব্দুর রব বলেন, দেড় বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচারের জন্য দৌড়াচ্ছি। তিনি বলেন, ছেলেটা যেমন লম্বা ছিল, দেখতেও সুন্দর ছিল। আমার সেই নায়কের মতো ছেলেটাকে খুন করেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। শুধু ফাঁসির রায় নয়, তা কার্যকর করতে হবে। ৫২ বছর বয়সি রব জানান, জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ফ্লাইওভারের নিচে গুলিতে নিহত হন তার ২৯ বছর বয়সি ছেলে মিরাজ। শহিদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স শেষে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ডেমরার ডগাইড়ে পরিবারসহ থাকতেন মিরাজ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো।

নারায়ণগঞ্জের শহিদ আদিলের বাবা মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত পেয়েছি।’ ‘দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অভিযোগের ঘটনাগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল্যায়িত হয়েছে। রায় কার্যকরের দিকেই এখন নজর দিতে হবে।’

জুলাই আন্দোলনে শহিদ ছাত্রদল নেতার এক স্বজন জাকির হোসেন প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘রায় ঘোষিত হলেও তার সন্তুষ্টি নির্ভর করছে রায় বাস্তবায়নের ওপর।’ পরিবারটির সদস্যরা বলেনÑ সংশ্লিষ্ট সব ঘটনার বিচার সম্পন্ন হলে তবেই তাদের অপেক্ষার অবসান হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!