বিশ্বের প্রথম এক ডোজের ডেঙ্গু টিকার অনুমোদন দিয়েছে ব্রাজিল। গত বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘আনভিসা’ এই টিকার অনুমোদন দেয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে যখন বিশ্বজুড়ে মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তখন এই টিকাকে ‘ঐতিহাসিক’ অর্জন হিসেবে দেখছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর আগে জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে এর ব্যবহারও হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও টিকা আমদানির বিষয়ে নেই কোনো উদ্যোগ।
এর আগে করোনার ঊর্ধ্বমুখি সংক্রমণের সময় দেশীয় একটি কোম্পানি ‘বঙ্গভ্যাক্স’ নামের টিকা উদ্বোধন ও এর অনুমোদন পায়। যেহেতু এখন করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তাই এই টিকাটি অকার্যকরই রয়েছে। এদিকে গত বছর আইসিডিডিআর’বির আবিষ্কৃত ডেঙ্গুর টিকা ‘টিভি০০৫’ টিকাকেও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। মশা নিধন কার্যক্রমের নিষ্ক্রিয়তা এবং টিকা না থাকায় তাই বছরজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখিই থাকছে।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশেই যদি ডেঙ্গুর টিকার আবিষ্কার করা হয় বা উৎপাদিত টিকার যদি অনুমোদন হয় তাহলে হয়তো বাংলাদেশও ইতিহাসের খাতায় নাম লেখাতে পারত।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ব্রাজিলের সাও পাওলোর বুটানটান ইনস্টিটিউট ‘বুটানটান-ডিভি’ নামের একটি টিকা তৈরি করেছে। যা দেশটি ১২ থেকে ৫৯ বছর বয়সিদের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বে শুধু ‘টিএকে-০০৩’ নামের ডেঙ্গু টিকা প্রচলিত আছে। তবে এই টিকাটি তিন মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজে নিতে হয়। ব্রাজিলে তৈরি নতুন টিকাটির সুবিধা হলো, এটি একবার নিলেই চলবে। ফলে টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত ও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বুটানটান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এসপার কাল্লাস সাও পাওলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ব্রাজিলের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন। যে রোগটি আমাদের কয়েক দশক ধরে ভোগাচ্ছে, এখন আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি হাতিয়ার দিয়ে তার মোকাবিলা করতে পারব। ব্রাজিলজুড়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে ১৬ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালানোর পর এই টিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, গুরুতর ডেঙ্গু প্রতিরোধে এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ যেহেতু এর আগে করোনার টিকা উদ্ভাবন করতে পেরেছে তাই ডেঙ্গুর টিকাও উদ্ভাবন করা অসম্ভব কিছু নয় উল্লেখ করে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের হেড অব কোয়ালিটি ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা করোনার টিকা আবিষ্কারের পর যখন অনুমোদন পেলাম তখনই বিশ^জুড়ে করোনার সংক্রমণ কমতে থাকে। তাই আমাদের এই টিকা আবিষ্কার করেও কোনো কাজে লাগেনি। কিন্তু আমাদের ডেঙ্গুর টিকা তৈরিরও সব ধরনের সেট-আপ আছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আমরা ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর টিকা তৈরির অনুমতির জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না। সরকারের সাড়া পেলে কাজ শুরু করতে পারব এবং অবশ্যই কার্যকর একটি ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কার করতে পারব। আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে ৫৬৭ জন ডেঙ্গুরোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৬ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮৬ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৫ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) চারজন রয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯২ হাজার ৭৮৪ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক তিন শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক সাত শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে মোট ৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বছরের রোগ হিসেবেই ডেঙ্গুকে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এটি প্রতিরোধে টিকা আমদানির কথা বেশ আগে থেকেই বলে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই টিকা এখনি আনা সম্ভব নয় বা প্রদান সম্ভব নয় জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে এই টিকা আমদানির চাইতে মশা মারা কার্যক্রম কম ব্যয়বহুল। তাই মশা মারতেই জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে উচ্চ ক্ষমতার মশা মারার ওষুধ আমদানিরও তাগিদ তাদের।
বাংলাদেশেও ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগ সম্ভব উল্লেখ করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ চক্রবর্তী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। আমাদের ওষুধ এখন বিশে^র বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। করোনার টিকা পর্যন্ত দেশের একটি কোম্পানি তৈরি করেছে। তাই সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ডেঙ্গুর টিকার উদ্ভাবন বা আমদানি অসম্ভব নয় বলে মনে করি।’
কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এটি সম্ভব নয় উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘জাপানের টিকার এক একটির দাম প্রায় ৮৫ ডলার। প্রত্যেককে ২ ডোজ করে টিকা দিতে হবে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু তাই নয়, এটি প্রয়োগেরও নানা ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। কেউ যদি একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তাহলেই এটি শরীরে কাজ করবে। এতে করে প্রত্যেকটি মানুষকে ডেঙ্গু পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা তো আর জানব না যে, কেউ ডেঙ্গুতে কখনো আক্রান্ত হয়েছিল কি না। তাই এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া বলেই আমরা মনে করছি। তার চাইতে যদি আমরা মশা নিধন কার্যক্রমে জোর দিতে পারি সেটি বরং সহজ হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলে যেহেতু এই রোগের সম্ভাবনা থাকে না তাই এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন এডিস মশার প্রজনন না ঘটে, বা এর বিস্তার না হয়’।
দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবিত টিভি০০৫ টিকাটির তৃতীয় ধাপের ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘এর চতুর্থ ধাপের সফল ট্রায়াল শেষে এ বিষয়ে চিন্তা করা যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাওয়া হবে। এতে করে আমাদের আমদানি জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। আমরা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র’ বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের এই টিকার অগ্রগতি জানাবেন। আমরা সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ইতোমধ্যে টিকার নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কি নাÑ সে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এই টিকার অন্যতম সুবিধা এটি কয়েক ডোজ নয় বরং এক ডোজ দিলেই কাজ করবে। এর মাত্র একটি ডোজই সব ধরনের ডেঙ্গুর (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪) বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। আলাদা আলাদা ডোজ নেওয়ার দরকার হবে না। শিশুসহ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমনকি ডেঙ্গু আক্রান্ত না হলেও এই টিকা নেওয়া যাবে। আর অন্য টিকার তুলনায় এটি সস্তা হবে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। তাই আমরা এটি নিয়ে আশাবাদী।’
ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখি সংক্রমণের বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সচেতনতাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল মন্ত্র। আমরা সবাই জানি, কোথায় মশার উৎপত্তি হয়, কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু আমরা কেউ নিয়ম মানতে, সচেতন হতে রাজি নই। এটাই ডেঙ্গু বিস্তারে মূল সমস্যা। আমাদের অসচেতনতাই ডেঙ্গু মশা বিস্তারের মূল কারণ। কাউকে দোষারোপ না করে ডেঙ্গু মশা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যার যার অবস্থান ও কর্মস্থল থেকে আমরা সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করিÑ তবেই এ মহামারি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।’
প্রসঙ্গত, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গত বছরের ২ অক্টোবর জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ‘কিউডেঙ্গা’র অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া আগেই এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয় যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। দুই ডোজের এই টিকা শুধু ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সানোফি-এ্যাভেন্টিজের তৈরি ডেঙ্গু টিকা ‘ডেঙ্গাভেস্কিয়া’রও অনুমোদন দেয় কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি’র সহাতায় ‘টিভি০০৫’ নামে একটি ডেঙ্গু টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই পরীক্ষার প্রথম দুই ধাপে তারা সফলতা পেয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এই টিকার চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত ‘কিউডেঙ্গা’ আমদানি করে অন্তত ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভাইরাসজনিত রোগগুলো প্রতিরোধে টিকার ব্যবহার ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। যতদূর জানা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা কার্যকরী। যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্তদের একটি বড় অংশ শিশু ও কিশোর, তাই এই টিকা ব্যবহার করে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ছে না। সিটি করপোরেশন পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে কীভাবে মশা নিধন করা হবে তা নিয়েও নেই কোনো গাইডলাইন। এমন পরিস্থিতিতে মশা যেহেতু নিধন করা যাচ্ছেই না সেহেত একটি প্রজন্মকে ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচাতে টিকা আমদানির বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি। সেটি করা না গেলে তাদের টেকনোলজি এনে দেশে এই টিকা উৎপাদন করা হোক। শুধু তাই নয়, দেশে উৎপাদিত ‘টিভি০০৫’ টিকাটি দেশেই তৈরির বিষয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করা দরকার।’
‘টিভি০০৫’ টিকার বিষয়ে আইসিডিডিআর’বি জানায়, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় ডেঙ্গু টিকার গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। আইসিডিডিআর’বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় দ্বিতীয় ধাপে ১৯২ জন মানুষের মধ্যে টিভি০০৫ টিকাটির সফল ট্রায়াল চালানো হয়।
জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়। পরে ২০১৬ সাল থেকে এর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়। এর আওতায় এক থেকে ৪৯ বছর বয়সি ১৯২ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয় এবং পরবর্তী তিন বছর ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবাই স্বেচ্ছায় এতে অংশ নেন এবং তাদের দৈব-চয়ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয় বলে জানানো হয়। আইসিডিডিআর’বি এবং ইউভিএম-এর ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টারের (ভিটিসি) গবেষকরা ২০১৫ সালে ‘ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি)’ নামক গবেষণাটি শুরু করে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন