বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে জনসম্মুখে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ছিলেন সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদরা। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমনের জন্য মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মালবাহী একটি ট্রাকের চালক হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় তদন্তে সত্যতা পেয়ে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই আকরামুজ্জামান।
সম্প্রতি শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পেনাল কোডের ৩০২/৩৪-সহ ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১০৯/১২০-খ/৩২৪/৩২৬/৩০৭/১১৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি চলমান ছিল। মামলার ভিকটিম মো. হোসেন (২৫) একজন মালবাহী ট্রাকচালক। গত বছরের ১৯ জুলাই দেশের আন্দোলনের কারণে ঢাকার রাস্তায় কারফিউ জারি থাকায় ট্রাকটির সমস্যা হতে পারে অনুমান করে গাবতলী পার্কিং করে নিজের ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন চালক হোসেন। ভিকটিম মো. হোসেন মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় হোসেন মার্কেটের সামনে গার্মেন্টস পর্যন্ত পৌঁছামাত্র কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসিফ আহম্মেদের নির্দেশ পালন করার নিমিত্তে বাকি আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা গুলি করতে থাকেন। আসামিদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে মো. হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন জিহাদ ও শাহিন গুলিবিদ্ধ হন। যার মধ্যে ঘটনাস্থলেই মো. হোসেন মারা যান। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নিহত হোসেনের মা রীনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই আকরামুজ্জামান।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার এজাহার নামীয় আসামি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান ও জুনাইদ আহমেদ পলকরা জুলাই ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে জনসম্মুখে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেন। উপরোক্ত আসামিরা যেহেতু আন্দোলন দমনের জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনা করে সর্বশক্তি দিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমনের জন্য মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মামলার ভিকটিম হোসেন নিহত, ভিকটিম শাহিন ও সাজ্জাদ হোসেন জিহাদ আহত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পনা মোতাবেক, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে, অর্থের জোগান, উসকানি দিয়ে, অন্য আসামিদের পরামর্শ প্রদান করে, ষড়যন্ত্র করে দাঙ্গা, হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখমের মতো অপরাধ সংঘটিত করার অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায়।
মামলার চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেনÑ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সাদেক খান, সাবেক কাউন্সিলর আসিফ আহম্মেদ, তারেকুজ্জামান তারেক, সলিম উল্লাহ সেলু, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন