শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০৩:০৯ এএম

জনপ্রিয়তার শীর্ষে ফুলতলী সমুদ্রসৈকত

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০৩:০৯ এএম

জনপ্রিয়তার শীর্ষে ফুলতলী সমুদ্রসৈকত

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অতুলনীয় উদাহরণ ফুলতলী সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রের কলকল ধ্বনি আর বাতাসের স্নিগ্ধতায় মন কেড়ে নেয় এ পর্যটনকেন্দ্র। পড়ন্ত বিকেলে গোধূলির ছোঁয়ায় বিমোহিত হয় প্রতিটি পর্যটক। সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যাস্ত দেখা অনেক আনন্দদায়ক। আবহাওয়া যেমনই হোক পর্যটকদের ভিড় সব সময় দেখা যায় ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে। মন জুড়ানো এই পর্যটনকেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন যাইদ আল মারুফ

ফুলতলীর পটভূমি

ফুলতলী সমুদ্রসৈকত এই নামকরণ ছিল স্থানীয় পূর্বপুরুষদের। যা সংক্ষেপে ফুলতলী হিসেবেই পরিচিত। এটি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন উত্তর পরুয়াপাড়া গ্রামের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের পূর্বতীরে অবস্থিত। এক যুগ পূর্বে ও বর্তমান ফুলতলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে ঘন ঝোপঝাড় আর নির্জনতা কেটে ফুলতলী হয়ে উঠবে পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে (ঈৎুংঃধষ এড়ষফ) ক্রিস্টাল গোল্ড নামে একটি বিদেশি জাহাজ আটকে পড়ে আনোয়ারা পারকি সমুদ্রসৈকতে। যার ফলে আশপাশে জেগে ওঠে বিশাল চর। জাহাজটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় হলেও ক্ষতি হয়েছে পার্শ্ববর্তী ফুলতলী সমুদ্র সৈকতের। জাহাজটির কারণে জোয়ার ভাটার স্রোত পরিবর্তন হয়ে আঘাত হানে উত্তর পরুয়াপাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধে। বাতিঘর রাস্তা থেকে জেলেঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় চর থেকে বালু সরে যায়। স্রোতের ধাক্কায় ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা হয়। সংস্কারের চার বছর পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি মো. সালেহ দখলীয় খাস জায়গায় একটি মনোমুগ্ধকর ছাউনি তৈরি করে। যেটি তৈরি করা হয়েছিল লাল টিনশিড, চারিদিকে কাঠের রেলিং এবং রঙিন বাতি দিয়ে। দুপাশে দুইটি কাঠের রেলিং ডিজাইনে বসার স্থান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। কৌতূহল জাগে নেটিজেনদের মনে। স্থানীয় পর্যটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় শুরু হয় ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে। পর্যটকদের চাহিদা লক্ষ্য করে নির্মিত হয় রাজকুটির নামে একটি রেস্টুরেন্ট। যার নির্মাণশৈলী সবাইকে মুগ্ধ করে। স্থানীয়রা অনুপ্রাণিত হয়ে দিয়েছেন কফি শপ ও টি-স্টল। দিন দিন পর্যটকদের ভিড় বেড়ে চলছে ফুলতলীতে। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

মন ভোলানো দৃশ্য

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলতলীর দৃশ্যেরও পরিবর্তন হয়। সকালবেলায় পর্যটকের সংখ্যা থাকে খুব কম। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে টি স্টল থেকে গরম গরম চা খাওয়া সমুদ্র দেখে দেখে।একটা খুব অনুভূতিশীল সময় পার করা যায়। বেলা তিন ঘটিকা থেকে শুরু হয় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। সমুদ্রে ভাটা পড়লে সবাই নেমে যাই সৈকতে। অনেকেই খেলে ফুটবল আবার অনেকেই ব্যস্ত থাকে সেলফি ফটোশুট নিয়ে। খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায় ভেজা বালিতে। অনেকে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে গোসল করে সমুদ্রে। সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যের বাড়ি ফেরা দেখে সবাই। সন্ধ্যা হলে সবাই উঠে আসে রাস্তায়। পাসের টি-স্টল থেকে গরম গরম নাস্তা নিয়ে জমে উঠে গানের আড্ডা। হিমেল বাতাসে জুড়ে যায় সবার মন। রাতে সমুদ্র দেখার অনুভূতি পায় পর্যটকরা। স্রোতের আওয়াজ পর্যটকদের সারাদিনের ক্লান্তি মুছে দেয়।

সুযোগ সুবিধা

কোথাও যাওয়ার পর যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় মানুষ, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম খাবার-দাবারের অসুবিধা। ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে রয়েছে রাজকুটির রেস্টুরেন্ট। যেটা দেখতে যেমন সুন্দর তার খাবারও তেমন সুস্বাদু। স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, কোরমা পোলাও, বারবিকিউ, গ্রিল, চিকেন শর্মা, কাকড়া ফ্রাইসহ অঢেল খাবারের সমাহার। যেখানে ঘরোয়া পরিবেশে দুপুর ও রাতের খাবারও পাওয়া যায়। ছোটদের জন্য রয়েছে দোলনা। রাজকুটিরের পেছনে রয়েছে লম্বা দীঘি। যেখানে গোসল করা সম্পূর্ণ ফ্রি। দীঘিতে রয়েছে প্যাডেল বোট। যেগুলো চালিয়ে পর্যটকরা আনন্দ পায়। এ ছাড়া আরও রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট টি-স্টল, কফি শপ। যেগুলোতে সন্ধ্যার পর পাওয়া যায় পেঁয়াজু, চটপটি, ফুচকা, চিংড়ি, কাকড়া ফ্রাইসহ আরও অনেক মজার মজার খাবার। রাজকুটির থেকে একটু উত্তরে রয়েছে ইবাদত খানা। যেখানে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় আজান হয় এবং জামাতের সহিত নামাজ আদায় করা হয়। ইবাদত খানার পাশে ওযু এস্তেঞ্জার সুব্যবস্থা রয়েছে। নামাজের ক্ষেত্রে মহিলারা রাস্তার পূর্বপাশে তাবু টাঙাতে পারে।

যাতায়াত

ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে যাতায়াতের অনেক রাস্তা রয়েছে যেমন চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে ২৫ টাকা বাস বাড়ায় চাতুরী চৌমহনি আসবেন। সেখান থেকে সিএনজি যোগে ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে আসা যায় (লোকাল ভাড়া ৫০ টাকা)। কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আসলে কান্তির হাট দক্ষিণবন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নেমে সিএনজি বা অটোতে করে সেন্টার আসবেন (ভাড়া ১০ টাকা)। সেখান থেকে সিএনজি বা অটো যোগে ফুলতলীতে আসা যায় (ভাড়া ৪০ টাকা)। যদি বটতলী শাহ মোহসেন আউলিয়া মাজারপথে আসেন, তাহলে বটতলী থেকে সিএনজি বা অটো যোগে গুদারপাড়া রাস্তার মাথায় নামতে হবে (ভাড়া ৩০ টাকা)। সেখান থেকে অটোতে বা ১০-১৫ মিনিট হেঁটে, খাইরিয়া মাদ্রাসার পাশের রোড দিয়ে অনায়াসে আসতে পারবেন।

সতর্কতা

প্রতিটি জায়গায় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে দিনের বেলায় সর্তকতা হলো, সমুদ্রে গোসল করার সময় দেখে নিতে হবে সমুদ্রের স্রোত ও পানির পরিমাণ। পানি যদি একেবারেই কাছে চলে আসে তাহলে গোসল করা সম্পূর্ণ নিষেধ কারণ বড় বড় পাথরের যে ব্লকগুলো আছে পানির স্রোতে ধাক্কা লেগে মারাত্মক এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হঠাৎ করে ব্লকের ওপর উঠে ছবি তুলবেন না। যদি হাত ফসকে মোবাইল বা অন্য কিছু পড়ে যায় তাহলে সেটা আর নেওয়া সম্ভব হবে না। ব্লকের ওপর দিয়ে সমুদ্রসৈকতে নামবেন না। কারণ পা পিছলে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাতের বেলায় সতর্কতা হলো রাত ৮-৯টার ভেতর বাসায় ফিরে যাবেন। গভীর রাতে ফুলতলীতে অবস্থান করলে সেনাবাহিনী বা কোস্টগার্ডের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পকেটমার বা হাইজ?্যাকারের সম্মুখীন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। পরিশেষে বলা যায় ফুলতলী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পর্যটনকেন্দ্রটি আনোয়ারার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ফুলতলী সমুদ্রসৈকত হাজার হাজার পর্যটকদের মন ভালো করার ঠিকানা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!