ছোট ও বড় পর্দার সফল দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। তার অভিনয়ের স্বকীয়তা, চরিত্র বোঝার ক্ষমতা ও পরিশ্রমী মনোভাব দিয়ে খুব কম সময়েই দর্শকের বিশেষ ভালোবাসা অর্জন করেছেন। নাটক, ওটিটি ও সিনেমা সব মাধ্যমেই নিজেকে প্রমাণ করে চলা এই অভিনেত্রী সম্প্রতি ‘এটা আমাদেরই গল্প’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে আবারও আলোচনায়। কাজ ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিবুল ইসলাম আফ্রিদি
‘এটা আমাদেরই গল্প’ অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশপাশের মানুষ, দর্শক, যেখানে যাচ্ছি সবাই খুব প্রশংসা করছে। চরিত্রের প্রশংসাও করছে। গল্পটা খুব ভালো, পরিবার নিয়ে সবাই দেখতে পাচ্ছে।
প্রথমবার ধারাবাহিক নাটকে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। আসলে ধারাবাহিক নাটক বা একক নাটক কিংবা সিনেমা ব্যাপারটা এমন নাÑ আমার মনে হয় টিম এবং পরিচালক খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ভাইয়ার সেটে শিল্পীদের সর্বোচ্চ পরিমাণের আরামদায়ক পরিবেশ এবং সম্মান দেওয়া হয় এটা শুনতাম, এবার নিজেই অনুভব করেছি। কাজটি উপভোগ করেই করেছি। সামনে আরও পর্ব বের হবে, সবাই মজা করেই দেখবে আশা করি। সবার এতটাই ভালো লেগেছে যে, বলছে প্রতিদিন বের হলে ভালো হতো। প্রতিদিন একটা করে পর্ব চাচ্ছে। এটা খুব ভালো দিক।
প্রেমিকের নাম গোপন রাখার পেছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে কী?
প্রথমত, কারো ব্যক্তিগত জীবনে কতটুকু কি প্রকাশ করবে বা লুকাবে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করি। আমার যদি কেউ থেকে থাকে, সেটা আমি কতটুকু কাকে জানাব বা না থাকে সেটা নিয়ে আমি কি বলব এটা পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ ধরনের প্রশ্ন অবশ্যই আসবে যেহেতু আমি একজন পাবলিক ফিগার, তবে আমার মনে হয় কেউ কারো ব্যক্তিগত জীবন লুকিয়ে রাখে না। ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগতভাবেই রাখা জরুরি। আমার ব্যক্তিগত জীবন প্রচার করার কিছু নেই। বর্তমানে বিয়ে নিয়ে কোনো ভাবনাও নেই।
শিল্পী ও পরিবার এই দুই দিকের ভারসাম্য আপনি কীভাবে ম্যানেজ করেন?
পরিবারের সময় পরিবারকে দেই, কাজের সময় কাজকে দেই আর নিজের সময় নিজেকে দেই। আমি কাজ করলেও আমার অবসর সময়ে বের করি। সেই সময়ে একদিন থাকে আমার নিজের জন্য, একদিন পরিবারের জন্য, আরেকদিন থাকে আমার বন্ধুদের। আমি এই সময়টা ভাগ করে নিয়ে থাকি। কাজ এবং অন্যদের সময় দেওয়া জীবনের একটি অংশ। তাই সবকিছুর ভারসাম্য রাখতে হয়।
আহত হয়ে পায়ে প্লাস্টার নিয়ে শুটিং চালিয়ে গেছেন। এত ধৈর্য, মানসিক-শারীরিক প্রস্তুতি ও অনুপ্রেরণার উৎস কী ছিল?
বরাবরই মনে করি কাজটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার কাজের পাশাপাশি যেখানে কাজ করি সেখানে একটা কাজ আমার একার নয়, এখানে পরিচালক, শিল্পী, মেকআপম্যান, প্রোডাকশনসহ অনেক মানুষের কাজ। এখানে অনেক মানুষ শ্রম দেয় এবং পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের জীবন চলে। একটা দুর্ঘটনার কারণে কাজটি ফেঁসে যাক কখনোই এটা চাই না। ওই জায়গা চিন্তা করে কাজটা করেছি। আমি চাই না আমার জন্য শুটিং ফেঁসে যাবে, ওই প্রেসারটা নিতে পারি না। আমাকে পরিচালক বলেছিল বিরতি নিতে। কিন্তু শুটিং ঝুলে গেলে অন্যরকম প্রেসার সবার উপর পরে। তাই আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
বর্তমানে নাটকে নিয়মিত। আগামীতেও এভাবে দেখা যাবে?
আমার কাজ সবসময় দেখতে পাবে, সেটা নাটক হোক ওটিটির কাজ কিংবা সিনেমা হোক। আমি কাজ করে যাচ্ছি, সেটা যখন প্রকাশ পাবে তখনই দর্শক সেটা দেখতে পাবে।
বলা যায়, সিনেমায় আপনার সুদিন চলছে। নাটকেও সমানভাবে সাড়া পাচ্ছেন। অনেকেই সেটা পায় না। কি বলবেন?
আমি এভাবে চিন্তা করি না। কাজ শুরু করার পর থেকেই আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কে, কীভাবে দেখে সেটা সম্পূর্ণ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যক্তিগত মতামত। কিন্তু আমার জীবনে কী সিদ্ধান্ত নেব, কী করব; কীভাবে করব, কী অর্জন করতে চাই, এসব সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিই। আমি কী ধরনের অভিজ্ঞতা চাই, কীভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চাই, সব কিছুই আমি আমার মতো করেই করি। দর্শকের প্রতিক্রিয়া হোক বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, যা-ই হোক না কেন, আমি আমার নিজের মতো করে কাজ করি। আমার ভেতর থেকে একটা ডাক আসে, না এটা আমি করব। আমার যখন গড ফিলিং যেটা বলে সেটা আমি করি। আমার সিনেমা দিয়ে শুরু কারণ, আমি ভালো একটি গল্প ও প্রোডাকশন পেয়েছিলাম তাই আমি করেছি। আমি যখন ভালো টিম, ভালো প্রোডাকশন পাই সেই অভিজ্ঞতা হাতছাড়া করি না। আমার কাছে সিনেমার প্রস্তাব আসে না, তাও না। কিন্তু আমার মনে হয় নরমাল একটা সিনেমা করার থেকে যেটা আসলে সাড়া পাবে না বা আমিও উপভোগ করব না, সেটার থেকে ভালো ওই সময়টা অন্য একটা প্ল্যাটফর্মে দেই যেটা আমি ভালো সাড়া পাব বা আমার অভিজ্ঞতা ভালো হবে। আমার মনে হয় কাজে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার জীবনের সময়টা নষ্ট করতে চাই না। যখন যে ভালো গল্পের প্রস্তাব পাচ্ছি সেই গল্পেই কাজ করতেছি। সেটা নাটক, ওটিটি ও সিনেমা যাই হোক। আমি কাজে থাকতে চাই। অনেকেই বলে যাদের কাজ ফ্রিতে দেখতে পাচ্ছি তাদের কাজ কেন টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হলে গিয়ে দেখব, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সব সিনেমা কিন্তু দর্শকরা টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেখেছে।
‘ন ডরাই’ দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল, তার আগে কি চাপ অনুভব করেছিলেন?
আমার জীবনে চাপ বলতে কিছু নেই। আমার যেটা যখন ইচ্ছা আমি সেটার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি এবং আমি সেটা করে ফেলি। আমার ইচ্ছা আছে অনেক, আমার কাছে যখন যেটা ইচ্ছা হয় সেটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজটা করে ফেলি।
প্রতিটি চরিত্রে স্টাইল ও প্রস্তুতি কি আলাদা থাকে?
ছোটবেলায় নাচ এবং থিয়েটার করার কারণে আমার কাছে অনেক কিছুই সহজ হয় কাজ করতে। যখন কোনো চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নেই তখন অনেক কাজে লাগে। আমার কাছে এক একটা কাজের প্রস্তুতি অবশ্যই একেক রকম হয়। আমার যেই চরিত্র মনে ধরে সেই চরিত্রের জন্য আমি অনেক অনুশীলন করি এবং রিসার্চ করি।
অভিনয়ে নাচের ভূমিকা কেমন?
আমি আড়াই বছর বয়স থেকে নাচি। তখন বুঝে উঠিনি যে আমি নাচ করছি, এটা জীবনের একটা অংশ। এখন সেভাবে অনুশীলন করতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় একটু অনুশীলন করি কিন্তু সময়টা বের করতে পারছি না। সময় পেলে অবশ্যই নাচ অনুশীলন করব। নাচ সিনেমার ক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগে। ওইরকম কোনো বাণিজ্যিক সিনেমা করিনি যেখানে নাচ আছে। তবে সামনে হয়তো দর্শক দেখতে পাবে।
মাঝে মধ্যে রোমান্টিক পোস্ট দেখা যায়। কাকে স্বপ্ন দেখেন, কে স্বপ্নে যাতায়াত করে?
‘আমি স্বপ্নে তোমায় দেখি’ এটা একটা গানের কথা। আমি ওই সময়ে গান শুনছিলাম, তখন হয়তো স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমি অনেক গান শুনি। মাঝে মাঝে কবিতাও লিখি, মানুষ মনে করে কাউকে নিয়ে লিখেছি, আসলে কাউকে নিয়ে লেখা নয়। কাউকে উৎসর্গ করে বা নির্দিষ্ট কাউকে বোঝানোর জন্য এ রকম একদমই না।
আগামীতে কি কাজ আসছে?
একটা ওয়েবে কাজ করেছি। কাজটি নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী এটা দর্শক খুব পছন্দ করবে। এখন বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। সময় হলে দর্শকরা জানতে পারবে। সেই সঙ্গে নাটক, সিনেমা সবই দেখতে পাবে দর্শক।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন