শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:১৭ এএম

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে কাল

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:১৭ এএম

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে  নিয়ে যাওয়া হবে কাল

গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় পৌঁছবে। শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে ও মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে আগামীকাল রোববার খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের পথে রওনা দেওয়া হবে। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিমানটি ঢাকা ছাড়বে বলে জানিয়েছেন দলীয় সূত্র ও কাতার দূতাবাস। এদিকে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যেতে গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় এসেছেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। বিমানবন্দর থেকেই তিনি ছুটে যান শাশুড়িকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। দিনভর সেখানে থেকে সন্ধ্যায় যান মায়ের বাসা ধানমন্ডিতে।

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো পুরোপুরি ভালো নয় বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতারা। তার সুস্থতা কামনায় গতকাল শুক্রবার দেশজুড়ে মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ দোয়া। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও প্রার্থনায় বসেছেন তাদের উপাসনালয়ে। অনেক জায়গায় মিলাদ ও শিরনি বিতরণ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে ‘দ্য লং ওয়াক টু ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে সরকার। এতে রাজনীতি ও দেশের স্বার্থে তার আপসহীন নেতৃত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চমানের চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা করছেন। তবে এই চিকিৎসা আরও উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছেন। সে কারণে তাকে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। চিকিৎসকেরা আশা করছেন কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে এসে পৌঁছলে রোববার (আগামীকাল) তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’

নির্জন কারাবাসে থেকেই খালেদা জিয়ার নানা রোগের সূচনা হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছিল। এর মধ্যে দুই বছর তাকে নির্জন, পুরোনো কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করেন, সেখান থেকেই তার রোগের সূচনা হয়। চিকিৎসার অভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনার সময় থেকে গত চার বছর তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি সুস্থ হলেও কিছুদিন আগে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

এদিকে খালেদা জিয়াকে নিতে গতকাল শুক্রবার কাতার সরকারের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারনে অ্যাম্বুলেন্সটি আসতে পারেনি। পরে জার্মানি থেকে আরেকটি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছে কাতার সরকার। গতকাল ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ বলেন, ‘কাতার সরকার এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিচ্ছে, সেটা জার্মানি থেকে ঢাকায় আসবে।’

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে আবারও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড গত বৃহস্পতিবার তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু রাতে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। যাত্রা পিছিয়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ। এখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলেও খালেদা জিয়াকে ১৩ ঘণ্টা বিমানে রেখে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা পুরোপুরি তার শারীরিক অবস্থা এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

শাশুড়িকে নিতে দেশে এসেছেন জুবাইদা রহমান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন তার পুত্রবধূ, তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। সকাল ১১টার দিকে তিনি বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমেই শাশুড়িতে দেখতে হাসপাতালে যান তিনি। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে জুবাইদার গাড়িবহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছায়।

বিমানবন্দরে জুবাইদাকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক রিচার্ড বেলি, জুবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর সৈয়দ শফিউজ্জামান ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল ইসলাম শামস, শারমীন আখতার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মঈনুল হোসেন। এদিকে দিনভর শাশুড়ির পাশে থেকে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে ধানমন্ডিতে পারিবারিক বাসা মাহবুব ভবনে যান জুবাইদা রহমান।

বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন বলেন, ‘ভাবি লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই সরাসরি এভারকেয়ারে আসেন। ম্যাডাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে ছিলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মিটিংও করেছেন। এরপর ধানমন্ডিতে বাবার (প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান) বাসা মাহবুব ভবনে যান। সেখানে ওনার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু রয়েছেন।’

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া : সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীসহ দেশের সব মসজিদে দলের পক্ষ থেকে এই দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি মসজিদে আয়োজিত বিশেষ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা।

রাজধানীসহ সারা দেশে অনুষ্ঠিত দোয়ায় বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ জনগণ অংশ নেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ দেশের অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় শুক্রবার সারা দেশে দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-১ শাখা থেকে চিঠি জারি করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সরকার তার আশু রোগমুক্তি কামনা করে দেশের সব মসজিদে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় প্রার্থনা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। তখনই কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কথা বলা হয়।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য চীনে নেওয়ার একটি প্রস্তাব সে দেশ থেকে এসেছিল। তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য চীন এয়ার অ্যাম্বুলেস পাঠাতেও আগ্রহী ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বড় ছেলে তারেক রহমান তার মাকে লন্ডনে নেওয়ার এবং সে জন্য কাতার আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের পক্ষেই মত দেন, কারণ ওই উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে সরাসরি লন্ডনে পৌঁছাতে পারে, জ্বালানি নিতে মাঝে কোথাও নামতে হয় না।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি রেখে কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কিছুদিন লন্ডনে তারেকের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে গত ৬ মে একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফিরেছিলেন।

খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারি ডকুমেন্টারি প্রকাশ : তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ‘শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনন্য চরিত্র। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জাতি আজ এক সুরে প্রার্থনারত।’

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত দুই মিনিট ৪০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যরে ‘দ্য লং ওয়াক টু ডেমোক্রেসি’ শিরোনামের ডকুমেন্টারিতে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্রপতি শাসন থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনে তার ভূমিকা চিত্রায়িত হয়েছে।

ডকুমেন্টারিতে এক-এগারোতে তার আপসহীন অবস্থানÑ নিজে ও দুই ছেলের নিরাপত্তার বিনিময়েও আপস না করার দৃঢ়তা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার আমলে মিথ্যা মামলায় তার কারাবরণের বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!