সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:৩২ এএম

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ব্যবহারের তালিকায় শীর্ষে এশিয়া

শাওন সোলায়মান 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:৩২ এএম

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ব্যবহারের তালিকায় শীর্ষে এশিয়া

আধুনিক বিশ্বে রোবট ব্যবহারের পরিসর ও গতি বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পক্ষেত্র থেকে গৃহস্থালি, চিকিৎসা থেকে বিনোদন। সবখানেই রোবটের উপস্থিতি দৃশ্যমান। তবে রোবট ব্যবহারে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে আছে এশিয়া; বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ব্যবহারে। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ইনস্টল হওয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের ৭২ শতাংশই হয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়। আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রোবটিকস (আইএফআর) এবং স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটস এর সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এশিয়া এখন শিল্প রোবট স্থাপনের শীর্ষে। পাশাপাশি ২০২৩ সালে ইনস্টল হওয়া বিশ্বের মোট শিল্প রোবটের ৭৮ শতাংশই হয়েছে পাঁচটি দেশে- চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি। 

২০২৩ সাল পর্যন্ত হিসেব বিবেচনায় আইএফআর এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেবছর বিশ্বব্যাপী ৫ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি নতুন শিল্প রোবট স্থাপন করা হয়েছে, যা ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর মধ্যে ৭২ শতাংশই স্থাপন হয়েছে এশিয়ায়; মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ইউনিট। যদিও ২০২২ সালের তুলনায় এটি ৫ শতাংশ কম, তবুও এই অঞ্চলের প্রাধান্য অটুট। এককভাবে চীনই স্থাপন করেছে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার রোবট অর্থাৎ বিশ্বে স্থাপিত প্রতি দুইটি রোবটের একটি চীনে। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার জাপানে ২০২২ সালে নতুন রোবট স্থাপন হয়েছিল ৪৬ হাজারের বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম।

ইউরোপ ২০২৩ সালে ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক বাজার, যেখানে ৯২ হাজার নতুন রোবট স্থাপন হয়েছে; যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। জার্মানি একাই স্থাপন করেছে ২৮ হাজারের বেশি রোবট (+৭%), এরপর ইতালি ১০ হাজার (-৯%) এবং ফ্রান্স ৬ হাজার (-১৩%)। আমেরিকা অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র স্থাপন করেছে ৩৭ হাজারের বেশি রোবট (-৫%), এরপর মেক্সিকো প্রায় ৬ হাজার (-৩%) এবং কানাডা ৪ হাজারের বেশি (+৩৭%)। আইএফআর এর হিসাবে, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি মিলেই ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী রোবট স্থাপনের ৭৮ শতাংশ (৪ লাখ ২০ হাজার ইউনিট) সম্পন্ন করেছে। 

শিল্প রোবটের প্রধান গ্রাহক খাতগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অটোমোটিভ (৩০%), ইলেকট্রনিক্স (২৭%), মেটাল ও মেশিনারি (৮%), প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল (৭%) এবং খাদ্য ও পানীয় শিল্প (৪%)। স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটস এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক শিল্প রোবট বাজারের আকার হবে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শীর্ষ দুইটি ইন্ডাস্ট্রি হবে অটোমোটিভ (৩০ শতাংশ) এবং এবং ইলেকট্রনিক্স (২৭ শতাংশ)। ২০২৫ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে রোবটের এই বাজার গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যার মূল চালিকা শক্তি হবে চীন।

২০২৩ সালে বাজারে রোবটের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল সুইস-সুইডিশ গ্রুপ এবিবি (১৩%) এবং জাপানি প্রতিষ্ঠান এপসন (১৩%)। অন্যান্য বড় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে জাপানের ফ্যানুক (১১%), কাওয়াসাকি (৮%), ইয়াসকাওয়া (৮%), ডেনসো (৪%); ডেনমার্কের ইউনিভার্সাল রোবটস (৪%), ইতালির কোমাউ (১%) এবং জার্মানির কুকা (৬%)। কুকা’র ৯০ শতাংশের বেশি মালিকানা রয়েছে চীনের ‘মিডিয়া’ নামক ইলেকট্রনিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানির কাছে। 

শুধু শিল্প নয়, গৃহস্থালি ক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে গৃহস্থালি কাজের জন্য সার্ভিস রোবটের বৈশ্বিক রাজস্ব ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৭ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ২২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। ভোক্তা পর্যায়ে সার্ভিস রোবটের সংখ্যা ২০২৫ সালে পৌঁছাবে ৩ কোটি ৯৭ লাখে এবং ২০২৭ সালে ছাড়িয়ে যাবে ৫ কোটি। এই রোবটগুলোর মধ্যে রয়েছে রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, রোবটিক খেলনা, এমনকি ড্রোনও। জনসংখ্যার বার্ধক্যও এ বাজার বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশেষত বৃদ্ধদের সহায়তায় তৈরি মোবিলিটি অ্যাসিস্ট্যান্স রোবট এবং সামাজিক সঙ্গী হিসেবে রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। জাপানে কঠোর শ্রম আইন ও প্রযুক্তি গ্রহণে সামাজিক স্বীকৃতি থাকায় আতিথেয়তা ও খুচরা বিক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে সার্ভিস রোবট দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

২০২৫ সালে রোবট ব্যবহারের রাজস্বে সবচেয়ে বড় অংশ আসবে চিকিৎসা খাত থেকে, মোট ২৭ শতাংশ। শুধু অস্ত্রোপচারে নয়, বরং জীবাণুনাশ, পুনর্বাসন এবং সরবরাহ পরিবহনের ক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার হচ্ছে। গৃহস্থালি সার্ভিস রোবট ২০২৫ সালে রোবট রাজস্বের প্রায় ২০ শতাংশ দখল করবে। অন্যান্য সার্ভিস শিল্পের অবদান থাকবে আরও ১০ শতাংশ। বিনোদন, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, অটোমোটিভ, লজিস্টিকস, কৃষি ও কেমিক্যাল শিল্প; সব মিলিয়ে রোবট ব্যবহারের বাকি অংশ গড়ে এক অঙ্কের শতাংশে সীমাবদ্ধ। তবে রোবট বারিস্তা বা রোবট সার্ভারের মতো উদ্ভাবন ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ভবিষ্যতের আরও বড় ব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট, রোবটের ব্যবহার শিল্প থেকে শুরু করে গৃহস্থালি ও চিকিৎসা পর্যন্ত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি। এই কয়েকটি দেশ বিশ্বব্যাপী শিল্প রোবট স্থাপনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, অন্যদিকে গৃহস্থালি ও সার্ভিস রোবটের বাজারও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সামাজিক প্রয়োজনের কারণে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে আগামী দশক হবে রোবট প্রযুক্তির বৈশ্বিক বিস্ফোরণের যুগ। যেখানে মানুষের জীবনযাত্রা ও উৎপাদনশীলতায় রোবট হবে অপরিহার্য সঙ্গী। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোবটের ব্যবহার এখনো প্রায় শূন্যের কোঠায়। দেশের প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে একাডেমিয়া বা গবেষণা পর্যায়ে রোবটের কিছু ব্যবহার দেখা গেলেও, শিল্পখাতে এখনো রোবটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার বা উপস্থিতি নেই। তবে তৈরি পোশাক খাত এবং ফার্নিচার শিল্পের একটি করে দেশিয় প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমে রোবট ব্যবহারের দাবি করেছে। 

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর ইনফোটেককে বলেন, ‘দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে এখন রোবটের ব্যবহার শুরু করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতের দিকে তাকালে দেখব সেখানে এখনো এর ব্যবহার নেই। যে কারণে ভিয়েতনামের থেকেও আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা সেমিকন্ডাক্টরের মতো নতুন নতুন খাত নিয়ে কাজ করতেছি, কিন্তু যে খাত থেকে বেশি আয় হয়, তার আধুনিকায়নে উদাসীন। স্বস্তা শ্রমবাজারের সুবিধা নিয়ে এতদিন কাজ করেছি, কিন্তু এই সুবিধা বেশিদিন থাকবে না। আমাদের শ্রমবাজারও স্বস্তা থাকবে না। তখন কী হবে? তাই দেশের বিদ্যমান ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে শিল্প খাতে রোবটের ব্যবহার বাড়ানো দরকার’।  

রোবট গবেষক ও ফারবোট রোবটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা এ এস ফারদ্বীন আহমেদ বলেন, ‘দেশের দুই একটি জায়গায় রোবটিক্স অটোমেশন চলতেছে, তবে সেটা খুবই নগণ্য। আমাদের দেশে এখনও রোবট ব্যবহারের পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো রোবটের প্রচলন চালুতে বিনিয়োগ করতে চায় না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নে আগ্রহী না। আমাদের দেশে মেধা আছে, চাইলে আমরাই দেশে রোবট প্রস্তুত করতে পারি। কিন্তু অনেকের কাছে দেশের প্রস্তুতের থেকে বিদেশ থেকে আমদানি অনেক আকর্ষণীয়। তাই সবমিলিয়ে দেশে রোবট ইনস্টল হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ কিন্তু রোবটিক্স; তাই যারা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’  
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!