সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাহমুদুল হাসান  

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:৪২ এএম

অ্যাপলের আয়ের সিংহভাগ জোগায় আইফোন

মাহমুদুল হাসান  

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:৪২ এএম

অ্যাপলের আয়ের সিংহভাগ জোগায় আইফোন

প্রযুক্তি জগতে অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের নাম মানেই এক ভিন্ন ধরনের আবেগ। স্টিভ জবসের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আজ ব্র্যান্ড মূল্য, উদ্ভাবন ও বিশ্বস্ত গ্রাহকগোষ্ঠীর দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী সকলকে ছাড়িয়ে গেছে। অ্যাপলের আয় ও বাজার দখলের যাত্রা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত তার সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্যের সঙ্গে, আইফোন। সম্প্রতি আর্থিক ফলাফল ও বাজার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু একটি ‘প্রোডাক্ট লাইন’ নয়, বরং ধারাবাহিকভাবে নতুন মডেল উন্মোচনের কৌশলই অ্যাপলকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের আসনে ধরে রেখেছে।

আইফোনে ভর করেই আয়ের রেকর্ড

২০২৫ সালের জুন প্রান্তিকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অ্যাপলের রাজস্ব আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৪ বিলিয়ন ডলারে; যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছে ১৮.২ বিলিয়ন ডলার। এই সাফল্যের বড় অংশই এসেছে আইফোন বিক্রি থেকে, যা এক বছরে ১৩.৫ শতাংশ বেড়ে ৪৪.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধি ও মূল্য সমন্বয়ের আগে অনেক গ্রাহক আগেভাগেই নতুন ফোন কিনে ফেলায় বিক্রি বেড়েছে।

যদিও অ্যাপলের আয় কেবল আইফোনের ওপর নির্ভরশীল নয়। ম্যাক ও সেবা খাতও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবু মোট রাজস্বের সিংহভাগই এখনো আইফোন বিক্রয় থেকে আসে। বিশেষ করে সেবা খাতের বছরভিত্তিক তুলনায় ১৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ২.৩ বিলিয়নের বেশি সক্রিয় ডিভাইস ও এক বিলিয়নেরও বেশি পেইড সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে অ্যাপল দীর্ঘমেয়াদে আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস নিশ্চিত করেছে। সেবা খাত থেকে জুন প্রান্তিকে অ্যাপলের আয় হয়েছে ২৭.৪ বিলিয়ন ডলার। কম্পিউটার ডিভাইস (ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ) ‘ম্যাক’ থেকে অ্যাপলের আয় হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার। ইয়ার বাড, হেডফোনের মতো এক্সেসরিজ থেকে ৭.৪ এবং আইপ্যাড থেকে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

নতুন মডেলের ধারাবাহিক প্রভাব

অ্যাপলের ইতিহাস বলছে, নতুন আইফোন উন্মোচন মানেই বিক্রি ও বাজার-শেয়ারে দর বৃদ্ধি। ২০০৭ সালের ২৯ জুন প্রথম আইফোন বাজারে আসার পর শুরুটা ধীরগতির হলেও ২০০৮ সালে বিশ্বে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রায় ১০ শতাংশই ছিল অ্যাপলের। ২০১০ ও ২০১১ সালের আইফোন ৪ ও ৪এস বাজারে বিপ্লব ঘটায় ‘রেটিনা ডিসপ্লে’, সামনের ক্যামেরা ও নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে।

২০১৪ সালে আইফোন ৬ ও ৬ প্লাস প্রথম সপ্তাহান্তেই বিক্রি হয় ১ কোটি ইউনিট, যা পরের বছর ৬এস ও ৬এস প্লাস দ্বারা ছাড়িয়ে যায়। ২০২০ সালে আইফোন ১২ সিরিজের মাধ্যমে অ্যাপল আবারও বাজারে প্রবৃদ্ধি আনে এবং ২০২১ সালে ১৭.৩ শতাংশ গ্লোবাল শেয়ার নিয়ে স্যামসাংয়ের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকে।

সবচেয়ে সম্প্রতি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অ্যাপল বিশ্বে ২৩২.১ মিলিয়ন স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে, যা বৈশ্বিক বাজারের ১৮.৭ শতাংশ, স্যামসাং (১৮ শতাংশ) ও শাওমি (১৩.৬ শতাংশ)-এর চেয়ে এগিয়ে। যদিও অ্যাপল ও স্যামসাং উভয়েরই বাজার-শেয়ারে সামান্য পতন হয়েছে, চীনা ব্র্যান্ডগুলোর উত্থানের কারণে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আইফোন ১৬ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোন, বিশেষ করে জাপান ও মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকা অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা বেশি।

আয়ের সমীকরণে আইফোনের ভূমিকা

অ্যাপলের ব্যবসায়িক সাফল্যের সূত্রটা স্পষ্ট, আইফোন শুধু একটি পণ্য নয়, বরং পুরো ইকোসিস্টেমের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন মডেল উন্মোচনের মাধ্যমে কোম্পানি একদিকে বিদ্যমান গ্রাহকদের আপগ্রেডে উৎসাহিত করে, অন্যদিকে নতুন গ্রাহক যুক্ত করে। প্রতি বছরের নতুন সংস্করণ বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং পুরোনো মডেল বিক্রয়েও গতি আনে।

অন্যদিকে সার্ভিস ব্যবসা যেমন অ্যাপ স্টোর, অ্যাপল মিউজিক, আইক্লাউড; আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ডওয়্যার বিক্রয় ও সার্ভিস রাজস্ব একে অপরকে পরিপূরক করে, যা দীর্ঘমেয়াদে আয়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যদিও আইফোন বিক্রি এখনো অ্যাপলের মূল চালিকা শক্তি, তবে চীনা ও অন্যান্য এশীয় ব্র্যান্ডের প্রতিযোগিতা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, মূল্য প্রতিযোগিতা এবং বাজার-পরিস্থিতির পরিবর্তন কোম্পানির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

তবুও অ্যাপলের সাফল্যের কৌশল। ব্র্যান্ড বিশ্বস্ততা, প্রিমিয়াম পণ্যের মান, সমন্বিত ইকোসিস্টেম এবং বার্ষিক নতুন মডেল উন্মোচন, যতদিন অব্যাহত থাকবে, ততদিন আইফোনই থাকবে কোম্পানির আয়ের প্রধান স্তম্ভ। এবং সম্ভবত আরও অনেক বছর ধরে, আইফোন উন্মোচনের দিনগুলো অ্যাপলের জন্য কেবল প্রযুক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ নয়, বরং আর্থিক সাফল্যের নতুন অধ্যায় শুরুর দিন হিসেবেই বিবেচিত হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!