বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন কিংবা ওয়েভ এনার্জি মিলিয়ে বিশ্ব এগোচ্ছে টেকসই শক্তির পথে। এই পথে এবার চীন যুক্ত করছে নতুন এক অধ্যায়। চীনের বিজ্ঞানীরা আনতে যাচ্ছেন আকাশে ভাসমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। এ উদ্যোগকে বলা হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। চীনের বেইজিং এসএডব্লিউইএস এনার্জি টেকনোলজি তৈরি করেছে বিশ্বের প্রথম মেগাওয়াট-স্তরের ভাসমান উইন্ড টারবাইন।
দেখতে অনেকটা এয়ারশিপের মতো হলেও কাজ করবে টারবাইনের মতোই। ‘এস-১৫০০’ নামের এই সিস্টেমটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাবি করা হচ্ছে ১ মেগাওয়াট। নির্মাতাদের দাবি, এটি বিশ্বের সেরা টারবাইনগুলোর তুলনায় ৩০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উদপাদন করতে সক্ষম হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ওয়াং হানকের কথামতো, একটি ভাসমান টারবাইন প্রচলিত ১০০ মিটার উঁচু একটি উইন্ড টারবাইনের সমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। ভাসমান টারবাইনটি প্রায় ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় ভেসে থাকবে।
এই উচ্চতায় বাতাস ভূমির চেয়ে প্রায় তিনগুণ দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে টারবাইনটি একই সময়ে প্রচলিত টারবাইনের তুলনায় প্রায় ২৭ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে।
এস-১৫০০ সিস্টেমে কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি ১২টি মাইক্রো-জেনারেটর রয়েছে। এটি হিলিয়ামের সাহায্যে আকাশে ভেসে থেকে বাতাসের শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তর করবে এবং কেবলের মাধ্যমে তা মাটিতে পাঠাবে। পুরো সিস্টেমটির ওজন এক টনেরও কম, যা পরিবহন ও স্থাপনায় সহজ করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাসমান টারবাইন দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে। যেখানে প্রচলিত টারবাইন বসানো কঠিন, সেখানে আকাশভাসা এই ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে কার্যকর বিকল্প। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বা পাহাড়ি এলাকায় এটি শক্তির নতুন উৎস হতে পারে।
এসএডব্লিউইএস সিস্টেমটি তৈরি করেছে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সহযোগিতায়। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষামূলকভাবে ‘এস-৫০০’ ভাসমান টারবাইন চালায়। সেটি ৫০০ মিটার উচ্চতায় ভেসে ৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং সর্বোচ্চ সময় আকাশে ভেসে থাকার রেকর্ড গড়ে। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ‘এস-১৫০০’ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব যখন কার্বন নির্গমন কমিয়ে সবুজ শক্তির দিকে ঝুঁকছে, তখন আকাশে ভাসমান এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। চীনের এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে বিশ্বের নানা প্রান্তে এ ধরনের ভাসমান টারবাইন ব্যবহার হতে পারে।