ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলগুলোর ঐকমত্য

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে এসেছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি জানিয়েছেন, সংবিধানে জরুরি অবস্থাসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে কিছু বিষয় যুক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দিনব্যাপী সংস্কারবিষয়ক ও জুলাই সনদ প্রণয়নের জন্য সংলাপের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ: জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দুজন বিচারপতি থেকে একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে প্রথম দুজনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ থাকলে তৃতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা: জরুরি অবস্থা কীভাবে জারি হবেÑ এ বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী এককভাবে নন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনে জারি হবে জরুরি অবস্থা। এ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতা। সিদ্ধান্ত হয়Ñ জরুরি অবস্থা হলে নাগরিকের ‘জীবনের অধিকার’ এবং ‘নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার থাকবে’। জরুরি অবস্থা ঘোষণা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। 
তত্ত্বাবধায়ক সরকার: তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছালেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যে যেভাবেই হোক একটি যৌক্তিক জায়গায় আসতে, যা হবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেকোনোভাবেই হোক ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কারণ প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করায় অন্য সাংগঠনিক কাজ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আপনাদের অংশগ্রহণ বিলম্বিত হচ্ছে, তা আমরা চাই না। সেদিক থেকে বিবেচনা করে আমরা যে মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে আলোচনা করছি, সেগুলো নিয়ে দ্রুত ঐকমত্যের জায়গায় আসতে পারলে আমাদের পক্ষে এই পর্বের যৌক্তিক সমাপ্তি টানা এবং জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রথমত জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)তে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিষয়গুলো হলোÑ অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখ-তার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। 
তিনি জানান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া, জরুরি অবস্থা চলাকালীন অনুচ্ছেদ ৪৭(ক)-এর বিধান সাপেক্ষে কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার (জরমযঃ ঃড় ষরভব)  এবং বিচার ও দ- সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না।
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বাদশ দিনের আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকালের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐকমত্য সৃষ্টি করে জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে সোমবার আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।