ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

পাইলট হওয়ার স্বপ্নই কেড়ে নিল তৌকিরের জীবন

রূপালী প্রতিবেদক ও রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর মারা গেছেন। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১টার দিকে বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই (৭০১) যুদ্ধবিমানটি ক্লাস চলাকালে স্কুল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ঘটনায় মারাত্মক আহত অবস্থায় পাইলট তৌকিরকে সিএমএইচে নেওয়া হলে বিকেল ৪টার দিকে তিনি মারা যান। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়। 

ছোটবেলা থেকেই তৌকিরের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার; পাইলট হওয়ার। জীবনের সবচেয়ে বড় সেই স্বপ্নই কেড়ে নিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের প্রাণ। তার মৃত্যুতে রাজশাহী উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে তার বাসায় স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুরে। তিনি পাবনা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার স্ত্রী ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। 

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে নিহত ২০ এবং আহত হয়েছে ১৬৪ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ২, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১২, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত তৌকির ওরফে সাগরের মামা শওকত আলী জানান, ছোট থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন। পরিবারের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে অফিসার হবেন তিনি। তবে নিজের স্বপ্নেই অটল ছিল সাগর। পড়ালেখায় ছিলেন মেধাবী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে, সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
মামা আরও জানান, এক বছর আগে সাগর গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। এরপর আর আসেননি। কিছুদিন আগে সাগরের বিয়ে হয়। তার স্ত্রী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।

রাজশাহীতে শোকের মাতম: আমাদের রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের বাড়ি রাজশাহীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত পাইলট তৌকিরের পরিবারকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। নিহতের খবর পেয়ে গতকাল সোমবার রাজশাহী উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে তার বাসায় স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। 

ঘটনায় সাগরের পরিবারকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাইলট সাগরের মেজ চাচা মতিউর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
চাচা মতিউর রহমান বলেন, আমাদের বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে সাগরের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এরপর বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়। সেই হেলিকপ্টারে করে সাগরের বাবা তোহরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন ও ছোট বোন বৃষ্টিকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাগর রাজশাহী এসেছিল। ছোট ভাই মরদেহ নিয়ে এলে দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জানা গেছে, ২১ জুলাই অর্থাৎ গতকাল সোমবারই ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের সলো ফ্লাইট ট্রেনিংয়ের সর্বশেষ ধাপ। ফাইটার জেট অপারেট করার জন্য একজন পাইলট যে হাই স্কিল্ড, সেটিই প্রমাণিত হয়। ট্রেনিংয়ে পাইলটকে নেভিগেটর বা কো-পাইলট বা কোনো প্রকার ইন্সট্রাক্টর ছাড়া একা ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির একাই গতকাল ট্রেনিং ফ্লাইট অপারেট করছিলেন। এরই মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হয়।