ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫

রাজউকে তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি বিচারপতি মানিকের ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১২:২২ এএম

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ৯০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে রাজউকে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার সংস্থাটির উপপরিচালক সিফাত উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি রাজউক বরাবর চিঠি পাঠায়।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে জাল নথি তৈরি করে পাঁচ একর জমি পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে দেখান বিচারপতি মানিক। পরে সেখানে নিজস্ব ডেভেলপার দিয়ে সাতটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেন, যার দাম প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। 

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকারি বাড়িতে থেকে ভাড়া না দেওয়া এবং অর্থ পাচার করে লন্ডনে বাড়ি কেনারও অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে জমি বরাদ্দসহ যাবতীয় সম্পদের নথি চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত বছরের আগস্টে রাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে আটক হন। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে আটক করে বিজিবি।

ছাত্র বিক্ষোভের সময় বেসকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের একটি টকশোতে গিয়ে এক নারী উপস্থাপকের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন মানিক। সেই ভিডিও ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে সরকারি বাড়িভাড়া পরিশোধ না করার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়, অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে ২০১৭ সালে বাড়িটি ছাড়লেও বাড়িভাড়া, গ্যাস ও পানির বিল বাবদ সরকারের পাওনা ১৪ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা এখনো পরিশোধ করেননি তিনি। 

কে এই শামসুদ্দিন মানিক: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়। তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলার আইনজীবীও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তাকে হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল হন।

বিচারপতি থাকা অবস্থায় শাসসুদ্দিন মানিককে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। যে রায়টি কেন্দ্র করে মানিক সমালোচনার কেন্দ্রে আসেন সেটি হচ্ছে, কর্নেল তাহের হত্যা মামলার রায়। সেই রায়ে কর্নেল তাহেরের বিচারকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি জিয়াউর রহমানকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

২০১৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকা অবস্থায় মানিক তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহাকে একটি বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মানিক। এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন। অবসরে যাওয়ার কয়েক দিন আগে তিনি এ কাজ করেছিলেন।

২০১২ সালের শেষের দিকে বিচারপতি থাকা অবস্থায় বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়া নিয়ে লঙ্কাকা- বাধিয়েছিলেন। সেই ঘটনার জেরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছিলেন তিনি। পরে বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাইকোর্টে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমতা চেয়ে নিষ্কৃতি পান।

চাকরি শেষে বাড়ি না ছেড়েও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। ২০১২ সালে বিচারপতি থাকা অবস্থায় লন্ডনে এবং ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণের পরে আবারও তিনি লন্ডনে হামলার শিকার হন। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পাশপাশি ব্রিটেনেরও নাগরিক। বর্তমানে জেলখানায় আছেন তিনি।