বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৮:২১ এএম

শিলংয়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৮:২১ এএম

শিলংয়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস

আদিবাসী এলাকা শিলং। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। পুরো পাহাড়রাজ্যে খাসিয়া, গারো এবং জয়ন্তিয়া উপজাতির বসবাস। সমতলের মানুষ সেখানে যান ছুটি কাটাতে। সেই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প স্থানীয়দের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। মেঘালয় ভারতের রাজ্য হলেও বাংলাদেশি পর্যটক তাদের প্রধান ক্রেতা। সিলেটের সীমান্তবর্তী পর্যটন শহর ডাউকি ও মেঘালয়ের রাজধানী শিলং অনেকটাই বাংলাদেশি পর্যটননির্ভর। বৃহত্তর সিলেটসহ বাংলাদেশিদের অন্যতম পছন্দের জায়গা শিলং-চেরাপুঞ্জি। কিন্তু পর্যটনের সেই শিলং এখন ভালো নেই। ভালো নেই চেরাপুঞ্জিও।

গত এক বছর ধরে সেখানকার পর্যটনশিল্পে চলছে ভয়াবহ খরা। বাংলাদেশি কোনো পর্যটক এখন শিলং যাচ্ছেন না। যাচ্ছেন না জাফলংয়ের গা-ঘেঁষে থাকা ডাউকি অঞ্চলেও। ফলে সেখানকার পর্যটন ব্যবসায় রীতিমতো ধস নেমেছে। পুরো মেঘালয় এখন বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য। সেখানকার ডাউকি, সেনাংপেডেং, বরহিলফলস, রটব্রিজ, মাউলিনং ভিলেজ, চেরাপুঞ্জি, শিলং, এলিফ্যান্ট ফলস, বরোপানিসহ সবকয়টি পর্যটন স্পটে নেই কোনো বাংলাদেশি। শিলং পুলিশ বাজার এলাকায় পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেল এবং রেস্তোরাঁ এখন ক্রেতাশূন্য। আধিবাসী এলাকায় বাঙালি রেস্তোরাঁগুলো এখন সবচেয়ে বেশি সংকটে। এখানকার রেস্তোরাঁ মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। এমনকি কিছু বাঙালি হোটেল গড়ে উঠেছে, যেগুলোর মূল ক্রেতা হচ্ছে বাংলাদেশি পর্যটক। একসময় শিলংয়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা পুলিশ বাজার পয়েন্টে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। এখন সেখানে স্থানীয় আধিবাসী, ভারতীয় বাঙালি এবং স্থানীয় পর্যটক ছাড়া কোনো ভিড় নেই। সন্ধ্যার পর খা-খা করে শিলং পয়েন্ট। বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য মুখিয়ে থাকত ট্যাক্সিগুলোও। সেখানকার সেই ট্যাক্সিচালকরা এখন অলস সময় পার করছেন। রিজার্ভ যাত্রী যারা পরিবহন করতেন তারা এখন পাবলিক সার্ভিস শুরু করতে বাধ্য হয়েছেন। বিশাল, বি-টু’সহ বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশি পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে থাকত। সেগুলোও এখন ক্রেতাশূন্য প্রায়। এ তথ্য জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ী এবং টেক্সিচালকরা। চিকিৎসা ভিসায় শিলং ঘুরে আসা একাধিক ব্যক্তিও জানান, শিলংয়ের আগের চিত্র এখন আর নেই। বাংলাদেশি পর্যটক যাওয়া বন্ধ থাকায় সেখানকার পর্যটনশিল্প যেন তার জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছে। 

সূত্র জানায়, গত এক বছর ধরে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য হেলথ, তীর্থ, স্টুডেন্ট ও অফিসিয়াল ভিসা ছাড়া বাকি ভিসা বন্ধ রেখেছে। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদান একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের পর্যটনের সিংহভাগ ক্রেতাই বাংলাদেশি। বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় সেখানে বাংলাদেশি পর্যটক শূন্যের কোটায়। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর আগে যাদের এক বছর মেয়াদি ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তাদের ভিসার মেয়াদও শেষ। বর্তমানে মেঘালয়ে কোনো বাংলাদেশি পর্যটক নেই। এ কারণে পর্যটননির্ভর এই পাহাড়রাজ্য এখন বিদেশি পর্যটকশূন্য। সিলেটে থাকা ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের এক সিনিয়র দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ট্যুরিস্ট ভিসা ছাড়া বাকি ভিসা শর্তসাপেক্ষে চালু আছে। ট্যুরিস্ট ভিসা খুব সহসা চালুর কোনো সম্ভাবনাও নেই। তিনি জানান, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হবে নাÑ দেশটির সিদ্ধান্ত এ রকমই।  

নেপালি ট্যাক্সিচালক অঞ্জন দেবনাথ ট্যাক্সি চালান শিলংয়ে। তিনি প্রায় প্রতিদিন ডাউকি থেকে শিলংয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করতেন। এরা সবাই বাংলাদেশি। অজয় মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, এখন আমরা অলস সময় পার করছি। গত ছয় মাসে শিলং থেকে ডাউকি আসা হয়নি। বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আমাদের ডাউকি আসতে হতো। পর্যটকনির্ভর ট্যাক্সিচালকরা এখন অনেকটাই যাত্রীশূন্য। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তারা লোকাল সার্ভিস দিচ্ছেন। ত্রিপুরা থেকে শিলংয়ে বসবাসকারী ট্যাক্সিচালক শ্যামল সাহা জানান, শুধু ট্যাক্সিচালক নয়, এখানকার বাঙালি ও মুসলিম রেস্তোরাঁগুলো ছিল বাংলাদেশি ক্রেতানির্ভর। কিন্তু তারা এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।

দোকানভাড়াও অনেকে দিতে পারছেন নাÑ এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুলিশ বাজারের আশপাশে। পুলিশ বাজার কুইন্সরোডে থাকা শিলচরের বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, আমাদের মূল ক্রেতা বাংলাদেশি। তাদের জন্য এখন ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। আমরা ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি চলে যাবার অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। 

বাংলাদেশ থেকে আসাম রাজ্যের রাজধানী গোয়াহাটিতে অবস্থিত নারায়ানা হাসপাতালে মেডিকেল ভিসায় গিয়েছিলেন সিলেট নগরীর সুবিধবাজার এলাকার নূর উদ-দীন। তিনি বলেন, ডাউকি সীমান্তের বর্তমান অবস্থা দেখে আমার রীতিমতো কান্না পেয়েছে। এর আগে আমি অনেকবারই শিলং গিয়েছি। কিন্তু এতটা সুনসান নীরবতা দেখিনি। ডাউকি ইমিগ্রেশনে নেই আগের সেই ব্যস্ততা। সারা দিনে ১০ থেকে ১৫ জন ভিসাধারী হেলথ ও বিজনেস পারপাসে ইমিগ্রেশন পার হন। ডাউকি বাজারের ব্যবসায়ীরা হা-হুতাশ করে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি জানান, নারায়ানা হাসপাতালে অনেক বাংলাদেশি প্রতিদিনই চিকিৎসার জন্য যেতেন। এখন মাসেও নাকি বাংলাদেশি কেউ চিকিৎসাসেবা নিতে যাচ্ছেন না। নারায়ানা হাসপাতাল, গোয়াহাটির কমিউনিকেশন ম্যানেজার আতাউর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, তারা এখন বাংলাদেশি কোনো রোগীর দেখা পাচ্ছেন না বললেই চলে। 

সিলেটের জাফলংয়ের সীমান্তঘেঁষা ডাউকি শহরের দুজন হোটেল ব্যবসায়ী জানান, শুধু শিলং নয়, ডাউকি ও তার আশপাশের পর্যটন এলাকাগুলোর পরিস্থিতিও খুবই উদ্বেগজনক। ডাউকিতে আমাদের কাস্টমার বলতে ছিলেন বাংলাদেশিরা। দেশীয় পর্যটক এদিকে খুব কমই আসেন। একে কেন্দ্র করে গত ৪-৫ বছরে অসংখ্য হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠে। বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য থাকায় লসের বিরাট ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে আমাদের। সেনাংপেডেং ঝুলন্ত ব্রিজ পর্যটন স্পটের মূল ক্রেতাই ছিলেন বাংলাদেশিরা। সেখানকার পর্যটননির্ভর আধিবাসী ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!