চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবলমাত্র সরাসরিভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রশ্ন বিবেচনার দরকার নেই।
গতকাল শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ বিষয়ে জানান। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন মনে করে, জাতীয় সংসদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধির সভাপতিত্বের কারণে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ওপর একধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করার বিষয়েও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান না হওয়ার পক্ষে অবস্থান করেছে, যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করবে।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র সাংবিধানিক ব্যবস্থা দিয়ে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করা যাবে তা নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন করার একটা বড় রকমের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সদস্যদের যে প্রভাব থাকে তা আইনত বৈধ নয় উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ বিষয়ে আদালতের একটা রায়ও আছে। যেভাবে স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্যরা যুক্ত থাকে, সেটা তাদের থাকার কথাও নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় যে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সাংসদদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণের পর তার ভবিষ্যৎ কী হবেÑ সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অবস্থা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা কী এবং কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করলে নোট অব ডিসেন্ট গুরুত্ববহ হবে তা জানতে বিশেষজ্ঞগণের মতামত নেওয়া হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল যখন ঐকমত্যে পৌঁছেছে তার গুরুত্বও বিবেচনা করতে হবে।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন যুক্ত নয়। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের কথা বলেছে। এ সনদ বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এ আলোচনার মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদি হবে না বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টি বিষয়ে কোনো ধরনের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল না, বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে।