- ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক ছাড়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প
- ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি
- রাশিয়া-ইউক্রেন অনড়, তবু বৈঠক নিয়ে আশা
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আলাস্কা বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আশা থাকলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে আজ সোমবার এ বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কির। এখনো পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় পক্ষ নিজ নিজ স্বার্থের বিষয়ে অনমনীয় থাকলেও আজ ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা নিয়ে ফের আশাবাদী হয়ে উঠেছে বিশ^ নেতৃবৃন্দ। গত শুক্রবার আলাস্কার বৈঠকে আলোচনার সূত্র ধরে ইতিমধ্যে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন যদি তাদের দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেয়, তাহলে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে।
সংগত কারণেই জেলেনস্কি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প-জেলেনস্কির আজকের বৈঠকে মূলত এ প্রস্তাব সামনে রেখেই আলোচনা শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। যদিও যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের তুলনায় জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্প ও ইউরোপের নেতাদের একধরনের চাপ রয়েছে। যেহেতু যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যে উন্মোচিত, তাই আজকের ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আজকের বৈঠকটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, ২২ আগস্টের মধ্যেই পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের এ কথা বলেছেন। এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। তবে আজকের বৈঠক থেকে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তার ওপর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল বলে মত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে আজ ওয়াশিংটনে যাবেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কি। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর এক্সে ভøাদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘সোমবার, আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করব, হত্যাকা- এবং যুদ্ধের অবসান সম্পর্কিত সমস্ত বিবরণ নিয়ে আলোচনা করব। আমন্ত্রণের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ তাদের কথোপকথনকে ‘দীর্ঘ ও বাস্তবসম্মত’ আখ্যা দিয়ে জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্প তাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এবং শুক্রবার আলাস্কায় তাদের বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সমর্থন করি। নেতাদের স্তরে মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে এবং এর জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় ফরম্যাট উপযুক্ত।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমেরিকান পক্ষ থেকে ইতিবাচক সংকেত নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সব অংশীদারের সঙ্গে আমাদের অবস্থান সমন্বয় করে চলেছি।’
অন্যদিকে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের ওপর একধরনের চাপ তৈরি করে ট্রাম্প গত শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’ আলাস্কায় বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।’
এদিকে ইউক্রেন দোনেৎস্কের কর্তৃত্ব ছাড়লে বেশির ভাগ অংশে যুদ্ধ থামাবে রাশিয়া। আলাস্কায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ট্রাম্পের কাছে নাকি এমন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন পুতিন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।
এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। তবে জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র।
সূত্রমতে, ইউক্রেনের দোনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। বিনিময়ে ঝাপোরিঝিয়া ও খেরসনের সম্মুখসারিতে যুদ্ধ থামাবে মস্কো। রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তিতে ঘুরেফিরেই অঞ্চল বিনিময়ের বিষয়টি সামনে আসছে। সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, আজ ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে জেলেনস্কিকে অঞ্চল বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হতে জোর দিতে পারেন ট্রাম্প।
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার এবং রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মার্জ বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনে কীভাবে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে আশার কথা হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে রয়েছে।’ অন্যদিকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, ‘আজ হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।’ তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলরের উদ্ধৃতি দিয়ে চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে সোমবারের বৈঠকের পর একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত রাশিয়ান পক্ষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়নি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন