শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম

বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা সত্ত্বেও  সড়কে নামছে বুয়েটের ই-রিকশা

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম

বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা সত্ত্বেও  সড়কে নামছে বুয়েটের ই-রিকশা

নগর পরিকল্পনাবিদ এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজধানীর সড়কে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নকশায় তৈরি ‘ই-রিকশা’। প্রাথমিকভাবে আগামী অক্টোবর মাসে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন আওতাভুক্ত তিনটি এলাকায় প্রায় এক লাখ ই-রিকশা নামানো হবে। সিটি করপোরেশন বলছে, নতুন ই-রিকশা নামানোর সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে পুরোনো রিকশা সড়ক থেকে তুলে ফেলা হবে। তবে এটিকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি ই-রিকশা ঢাকার মতো মহানগরীর যানজট ও গণপরিবহন সমস্যার সমাধান নয় বলেও দাবি তাদের। এমন বিরোধিতা ও সমালোচনার মধ্যেও নিজেদের এলাকায় ই-রিকশাসংক্রান্ত বিধিবিধান তৈরি ও আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনগুলোকে। এজন্য স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আওতায় ই-রিকশা নকশা ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য, ব্যাটারি রিচার্জকরণ এবং ই-রিকশার চলাচল সীমিতকরণ ও বাস চলাচলের রুটে নিষিদ্ধকরণের ক্ষমতা পেয়েছে সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের নেতৃত্বে ডিএনসিসিসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সড়কেও ই-রিকশা নামানোর পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য সিটি করপোরেশনকে ই-রিকশার মানদ-, মডেল ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের ক্ষমতা দিতে পরিবর্তন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এ।

এই আইনের ষষ্ঠ তপশিলের ১৯ নম্বর ক্রমের নিচে ১৯ (ক) ক্রমিক যুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ তপশিল সিটি করপোরেশনকে বিভিন্ন বিষয়ে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়। ১৯ (ক) ক্রমিক বলছে, ‘শ্লথগতির সাধারণ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, ই-রিকশা নকশা ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য, নির্ধারিত স্থানে ই-রিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারি রিচার্জকরণ, ই-রিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বিনষ্ট বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা, করপোরেশনের অনুমোদিত অঞ্চল বা স্থানে নিবন্ধিত ই-রিকশা চলাচল সীমিতকরণ এবং বাস চলাচলের রুটে ই-রিকশা নিষিদ্ধকরণ’। অর্থাৎ অত্র পরিবর্তনের আলোকে দেশের সব সিটি করপোরেশন ই-রিকশার মতো শ্লথগতির যানবাহনসংক্রান্ত এসব বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারবে। 

অত্র বিধির আলোকে ই-রিকশার নকশা ও প্রযুক্তিগত মানদ- নির্ধারণ কমিটিও গঠন করা হয় যার আহ্বায়ক ডিএনসিসি প্রশাসক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বাংলাদেশ  স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) উপপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাইন উদ্দীন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস এবং বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এহসান। কমিটির সদস্যসচিব ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক। এই কমিটি ইতোমধ্যে নিরাপদ ই-রিকশার স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন (বৈশিষ্ট্য) প্রস্তুত করেছে। 

এই ডিজাইনের আলোকে গত আগস্টে রাজধানীতে এক লাখ ই-রিকশা নামানোর পরিকল্পনা ছিল দুই সিটি করপোরেশনের। প্রাথমিকভাবে ডিএসসিসির আওতাধীন পল্টন ও ধানমন্ডি এবং ডিএনসিসির উত্তরা এলাকায় ই-রিকশা চালু হবে অক্টোবরে। এই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একেকটি এলাকায় বুয়েট নকশার ই-রিকশা নামানোর সাথে সাথে পুরোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে ফেলা হবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক ও ই-রিকশার নকশা এবং প্রযুক্তিগত মানদ- নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ এজাজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনেকেই মনে করছেন যে, সড়কে বিদ্যমান রিকশার সাথে আমাদের রিকশাগুলো যুক্ত হবে। বিষয়টা এমন না। যেখানে ই-রিকশা নামবে, সেখান থেকে পুরোনো রিকশা সরিয়ে ফেলা হবে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ই-রিকশা চালু করার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সরিয়ে ফেলা হবে। এতে সড়কে নতুন রিকশা যুক্ত হবে না’। 

তবে সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা ও সমালোচনা করে বলছেন, নতুন ই-রিকশা দিয়ে পুরোনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। নতুন রিকশা সড়কে নামিয়ে পুরোনো রিকশা সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ সফল হবে না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে রিকশার লাইসেন্স আছে ৮০ হাজার কিন্তু রিকশা চলে লাখ লাখ। ঢাকা শহরে অবৈধ সিএনজি চলে অন্তত পাঁচ হাজার। এগুলো কি বন্ধ করা গেছে? আজ পর্যন্ত সিএনজিকে মিটারে চলা বাধ্য করা গেছে? কিছুদিন আগেও তো অটোরিকশা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে কী সফল হওয়া গেছে? বাসের মতো অন্যান্য গণপরিবহনে কি শৃঙ্খলা আছে? সবকিছুর উত্তর হচ্ছে, না। এখন যদি চিন্তা করা হয় যে, নতুন ই-রিকশা আসলে পুরোনো রিকশা বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা ঠিক না। এটা বাস্তবসম্মত না। এমনকি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ সফল হবে না।’  

ই-রিকশা সড়কের যানজট এবং বিশৃঙ্খলা হ্রাসের সঠিক সমাধান নয় বলেও উল্লেখ করেন ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাস্তা কম কিন্তু গণপরিবন বেশি এবং গণপরিবহনের চাহিদা বেশি। এই সমস্যা রিকশার মতো ছোট ছোট যানবাহন দিয়ে হবে না, বরং বাসের মতো গণপরিবহন দিয়ে এর সমাধান করতে হবে। এর উদাহরণ দেখিয়েছি হাতিরঝিল চক্রাকার বাস এবং গুলশানের বাস (ঢাকা চাকা) দিয়ে। এই দুটি বাস দেখিয়েছে যে, বিশৃঙ্খলা না করেও লাইন ধরে আরামদায়ক গণপরিবহনে যাত্রীরা চলাচল করতে পারেন এবং একসাথে অনেক যাত্রী এর সুবিধা নিতে পারেন। এখন ই-রিকশায় মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা ও চালকদের প্রশিক্ষণে। এই দুটো বিষয় রাজধানীর গণপরিবহনের মূল রোগ না, বরং রোগের উপসর্গ। এখন আপনি মূল রোগের চিকিৎসা করবেন নাকি উপসর্গ নিয়ে পড়ে থাকবেন? ই-রিকশা প্রকল্পের সাথে মূলত কোনো গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ নেই। যারা আছেন তারা সহজভাবে যা দেখছেন, সেভাবে নানা কিছু করছেন। সমস্যা হচ্ছে, তারা একসময় চলে যাবেন, ঠিক যেভাবে আগের কর্তাব্যক্তিরা চলে গেছেন; কিন্তু আসল সমাধান কখনোই আসবে না।’  

শামসুল হক আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো নগরীর রিকশার মতো ছোট ছোট যানবাহন দিয়ে সফলতা অর্জনের ইতিহাস নেই। বরং রিকশা তুলে ফেলে অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার উদাহরণ আছেÑ কলকাতা। কলকাতায় যখন বাম সরকার ক্ষমতায় ছিল, যারা সবসময় শ্রমজীবীদের কথা বলে, তারা প্রথমে রিকশা এবং ‘এক্কা’ (ঘোড়ার বাহন)কে কর্মসংস্থান হিসেবে দেখল। কিন্তু এগুলোর কারণে যখন অন্যান্য রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা কলকাতায় বিনিয়োগে অনাগ্রহী হলো, তখন এর কারণ অনুসন্ধানে দেখল যে, সড়কে যানজট ও ধীরগতি হওয়ার আগে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তখন কলকাতা সরকার দুই বছরের মধ্যে রিকশা এবং এক্কা তুলে ফেলল। মূল সড়কে বাইরে অলিগলিতে কিছু চলে, তবে তা খুবই সামান্য। আমাদেরও তেমন কিছু করতে হবে।’ 

বিশেষজ্ঞরা যাই বলুক, বুয়েটের তৈরি নকশা ও নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যের আলোকে চারটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ই-রিকশা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হলোÑ আকিজ মোটরস, মনির অটো ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউ গ্রামীণ মোটরস লিমিটেড এবং ডাইস্টার হাইটেক পাওয়ার অটোমোবাইলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তৈরি ই-রিকশা ডিএনসিসিতে প্রদর্শন করেছে। তবে গত আগস্টের এক সভায় ডাইস্টার ব্যতীত বাকিদের তৈরি রিকশা বুয়েটের নকশা ও বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করেনি মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এই অবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের মাওনায় ডাইস্টার এবং একই জেলার সদর এলাকায় আকিজের ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। তবে ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায়, এই পরিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এদিকে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে ই-রিকশা তৈরির সুযোগ দেওয়ায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোন যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাছাই করা হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, রিকশাগুলো ক্রয়ের কোনো বিষয় এখানে নেই। রিকশা তৈরির প্রস্তাবনা সবার জন্য উন্মুক্ত। এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক ও ই-রিকশার নকশা ও প্রযুক্তিগত মানদ- নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ এজাজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তো এখানে কোনো রিকশা ক্রয় করছে না, তাই দরপত্র আহ্বানের কোনো বিষয় নেই। রিকশা তৈরির সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত, চাইলে আপনিও তৈরি করতে পারেন। আগ্রহী প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে আবেদন করবে, আমরা দেখব যে তাদের রিকশা নির্ধারিত মানদ- এবং বৈশিষ্ট্যের কি না। সব ঠিক থাকলে, সেই প্রতিষ্ঠান আমাদের সড়কে চলাচলের অনুমতি পাবে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!