ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অর্থ পাচারের অভিযোগ

  ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে  মামলা করল দুদক

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:০০ পিএম
  • মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১৩টি ওভারসিজ রিক্রুটিং কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে জনপ্রতি প্রায় ৭৯ হাজার টাকা খরচ হলেও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো আদায় করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি এজেন্সির বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। মামলায় ১৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) বিভিন্ন পদে থাকার সময় আসামিরা সিন্ডিকেট গড়ে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার ৫ গুণ বেশি অর্থ নিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, বাছাই ও অর্থসংক্রান্ত শর্ত উপেক্ষা করে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। চুক্তির বাইরে বিভিন্ন ধাপে বাড়তি টাকা নিয়ে শ্রমিকদের ক্ষতি করার পাশাপাশি বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা অবৈধ অর্থ হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ-বিধির একাধিক ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেনÑ আকাশ ভ্রমণের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ কালাম; উইনার ওভারসিজ লিমিটেডের পরিচালক রহিমা হক ও মাহফুজুল হক; শাহীন ট্রাভেলসের মালিক শাহাদাত হোসাইন (তসলিম); নাভিরা লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ শাহিদুর রহমান, পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও মো. শামিম হাসান; আদিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের পরিচালক কে এম মোবারক উল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, নওশাদ আরা আক্তার ও হাছনা আক্তার আজাদ; ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার কনসালট্যান্স লিমিটেডের পরিচালক নাজমা আক্তার, জেড ইউ সায়েদ, জুহানা সুবাইতা ও জিসান সায়েদ; গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের মালিক রেহানা আরজুমান হাই; পি আর ওভারসিজ লিমিটেডের পরিচালক ইমান আকতার পুনম ও গোলাম রাকিব; জাহারত অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ, পরিচালক নাহিদা আক্তার ও রওশন আরা পারভিন; অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সির পরিচালক এ কে এম মোশারফ হোসেন ও মহিউদ্দিন আহমেদ; জান্নাত ওভারসিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল হালদার ভূঁইয়া, পরিচালক কাজী অদিতি রুবাইয়াত ও লিমা বেগম এবং মিডওয়ে ওভারসিজ লিমিটেড ও সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের, পরিচালক সাদিয়া মঞ্জুর, আহমেদ আতাউর রহমান, আহমেদ খালেদ লুবনানী ও আহমেদ ফয়সাল রমাদানী।

দুদক জানায়, তারা অবৈধভাবে সংগৃহীত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর ও পাচার করেছেন। এতে কর্মীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১২০(বি), ১৬১, ১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪২০ ও ৪০৯ ধারায় এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। 

এর আগে গত ১২ মার্চ মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে ১১২৮ কোটি ৬১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

সেখানে রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১২ পৃথক মামলা দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে তদন্তাধীন। আজকের মামলা মিলে মোট ২৫টি পৃথক মামলা হয়েছে। যার মধ্যে আসামি ৬৪ জন ও মোট আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ২৮৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।