একসময় গ্রামবাংলার খালবিল, হাওর-বাঁওড় ও জলাশয়ে দলে বেঁধে কোঁচ, বানা, পলো, বড়শি, ঠেলাজাল ও গৃহপালিত ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরত গ্রামের মানুষ। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো ও বানা দিয়ে মাছ ধরা। বাঁশের বেতে প্লাস্টিক কিংবা শক্ত সুতা দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করা হয় পলো ও বানা। পানির নিচের নরম মাটিতে ইউ আকারে বানা গেড়ে চারদিক থেকে হইহুল্লোড় করে চলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। বড় মাছ ধরতে পারলেই অঘোষিত চিৎকার আর হইহুল্লোড়ে মেতে উঠত সবাই। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা হলেও আগের মতো দেখা যায় না। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া অন্যরকম এক অনুভূতি। এ যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।
সম্প্রতি পলো ও বানা দিয়ে মাছ ধরার এমন দৃশ্য দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের হাতভাঙ্গা বিলে। সরেজমিনে হাতভাঙ্গা বিলে গিয়ে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ জন তরুণ ও যুবক মিলে পানিতে বানা গেড়ে হাঁক দিয়ে মাছ ধরছেন। তাদের মধ্যে শাহ্ আলম (৩০) নামে এক যুবক বলেন, গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য মাছ ধরার ফাঁদ ‘বানা’। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মাছ শিকারের প্রাচীন পদ্ধতি বানা।
তিনি আরও বলেন, বানা দিয়ে বিলে বা নদীতে স্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়া নিষেধ। এতে মাছের চলাচলে বিঘœ ঘটে। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য বানা দিয়ে ঘেরাও করে মাছ ধরা ক্ষতিকর বলে আমরা মনে করি না, বরং এটি গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার অংশ।
এ সময় হাতভাঙ্গা বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা যায় আনোয়ার ও রাকিব নামের দুজনকে। তাদের মধ্যে রাকিব বলেন, মাছ নিয়ে বাঙালির মনের কোণে আছে তীব্র আবেগ ও ভালোবাসা। একজন বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, মাছ তাকে কাছে টেনে নেবেই। তাই মাছ শিকারও যেন বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে কারণে আমাদের বলা হয় ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে গ্রামের মানুষ নানা সরঞ্জাম দিয়ে শিকার করে থাকেন, যার মধ্যে পলো গ্রামবাংলা মানুষের মাছ শিকারের একটি প্রাচীন অনুষঙ্গ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাছ চলাচলের গতি রোধ করে বানা দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তবে পলো দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি আছে।