ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেনী ও গাজীপুরে চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা

ফেনী ও গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

ফেনীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির অভিযোগে এক যুবক এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে এক কৃষককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের মধ্যম লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. মনসুর আহমদ বাহার (৪০)। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার কাজির ঘাটলা গ্রামের মুন্সিবাড়ির সুলতান আহমেদের ছেলে। অপর নিহত ব্যক্তি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ মোজাম্মেল (৫০)।

ফেনী পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মধ্যম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৌলভী আনোয়ার উল্লাহর পুরাতন বাড়ির হানিফের অটোরিকশাচালিত সিএনজিটি প্রতিদিনই বাড়ির দরজায় পার্কিং করে রাখা হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ এক ব্যক্তি সিএনজিটি চুরি করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যায়।

ফেনী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, মধ্যম লক্ষ্মীপুর গ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির সময় স্থানীয় জনতার পিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় চোর সন্দেহে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করছেন পরিবার। নিহত ব্যক্তি কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ মোজাম্মেল (৫০)।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাপাসিয়ার সনমানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও এলাকায় মতিউর রহমানের স্ত্রী মোছাম্মদ খুকি আক্তারের (৪০) বাড়ি থেকে হান্ডি পাতিল চুরি করার অভিযোগে মোহাম্মদ মোজাম্মেলকে স্থানীয় কয়েকজন আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৮টার দিকে মোজাম্মেলের মৃত্যু হয়।

নিহতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে নিজ বাড়ির সামনে থেকে ১০-১২ জন পাশের বাড়িতে নিয়ে চোর অপবাদ দিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। হত্যাকারীদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল।’

নিহতের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। আমি রাত ৩টার দিকে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে কম্পিউটার অপারেটর না থাকায় মামলা করতে পারিনি। এখন আবার থানায় যাচ্ছি অভিযোগ দেওয়ার জন্য। আমার স্বামী একজন কৃষক। একই সাথে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তাকে মেরে ফেলায় আমি আমার দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব?’

এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি জয়নাল আবেদীন ম-ল জানান, নিহতের মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় জনতা পিটিয়ে আহত করার পর সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।