ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঋণ করে ঘি খাওয়া

ঋণের দায়ে চার মৃত্যু, আবারও ধার করে চল্লিশা আয়োজন 

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম

ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন মিনারুল ইসলাম। কিন্তু এ ঘটনার পরও পরিবারের শিক্ষা হয়নি। আবারও ধারদেনা করে মৃতদের জন্য শনিবার লাখ টাকা ব্যয়ে চল্লিশা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী।

কেউ মারা গেলে ৪০ দিনের মাথায় করতে হয় ‘চল্লিশা’। কোনো কোনো এলাকায় এ অনুষ্ঠান ‘ফয়তা’ নামেও পরিচিত। সেখানে সমাজের মানুষ আমন্ত্রিত হন। দুপুরের খাবার খান। এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রুস্তম আলী ১ হাজার ২০০ মানুষকে খাইয়েছেন।

গত ১৪ আগস্ট রুস্তম আলীর ছেলে মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৩) আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে মিনারুল চিরকুটে লিখে গেছেনÑ ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান নেই; কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করতে হয়। এটা আমাদের এলাকার একটা প্রথা।’

শনিবারে বামনশিকড় গ্রামের এই আয়োজনে ভ্যানে চড়ে দূরের গ্রাম থেকে আসেন আত্মীয়স্বজন। খাওয়া-দাওয়া করেন পুরো গ্রামের মানুষও। রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলে বসে তারা খান। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। রুস্তম আলী ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখেন।

রুস্তম আলী বলেন, এ অনুষ্ঠানকে কেউ চল্লিশা বলে, কেউ বলে ফয়তা। সমাজের মানুষকে নিয়ে এটা করতে হয়। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।

তিনি বলেন, আশপাশের মানুষ বলছিল, চারজনের মরার কারণে বাড়ি ভারী ভারী লাগছিল। ছোট ছিলেপেলেরা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম, যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। এ কারণে দুপুরে দোয়া হয়েছে, তারপর খাওয়াদাওয়া। প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয়স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল।

টাকা জোগাড় হলো কীভাবে জানতে চাইলে রুস্তম আলী বলেন, ‘সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নাই।’ শোধ করবেন কীভাবে প্রশ্ন করলে বললেন, ‘১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। তা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই।’