চার দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়সহ রাজশাহী, বরিশাল, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গাজীপুরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাজধানীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য স্থানেও প্রায় একই সময়ে অবরোধ চলে। দুপুরের দিকে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট তৈরি হয়। এতে অফিসগামীসহ সড়কটিতে চলাচলকারীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় সড়ক ও রেল অবরোধের কারণে যানজটের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগও ব্যাহত হয়।
এদিকে আন্দোলনরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবি নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টিতে দুই পক্ষের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত আর আন্দোলন না করারও প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রকৌশলীদের দুটি পক্ষ আন্দোলন করছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে (গতকাল) আমরা দুই পক্ষের অভিভাবকদের সঙ্গে বসেছি। আমরা বলেছি, আপনারা নিজেদের পরিচয় ভুলে আমাদের পরামর্শ দেবেন, যাতে কীভাবে আমরা একটি সেতু গড়তে পারি। আজকে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ প্রকৌশলীদের দুটি পক্ষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানেরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। মোট ৬০ জন এসেছিলেন।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আন্দোলনরত দুই পক্ষের দাবিগুলো খানিকটা পরস্পরবিরোধী। একজনেরটা গ্রহণ করলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে একটা সেতু গড়ে তোলা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। আমরা নিজেদের থেকে নয়, ওনাদের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ওনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনÑ কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত তারা আর কোনো আন্দোলন করবেন না। রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো কাজেও তারা লিপ্ত হবেন না।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলোÑ প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন কর্তৃক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক তিন দফা দাবির পক্ষে পরিচালিত সব কার্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক অবিলম্বে বন্ধ করা; কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের উত্থাপিত যৌক্তিক ছয় দফা দাবির রূপরেখা ও সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ান-চ্যানেল এডুকেশন চালু করা।
ঢাকা:
গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। সড়ক অবরোধের কারণে সাতরাস্তা মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোয় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী-চালকেরা। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আপাতত সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। তবে তারা সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান করবেন। সড়কের ফাঁকা অংশ দিয়ে যান চলাচল করবে।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাশফিক ইসলাম বলেন, শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছেন। আন্দোলনে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ চারটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
দিনাজপুর:
একই দাবিতে দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় দিনাজপুর শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড রেলক্রসিংয়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দিনাজপুরের সঙ্গে ঢাকার রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস সকাল ১০টা, রাজশাহীগামী আন্তঃনগর বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস বেলা ১১টা থেকে দিনাজপুর স্টেশনে অবস্থান করে। এ ছাড়া বগুড়াগামী আন্তঃনগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৯টায় বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর স্টেশনে এবং বিরলগামী দিনাজপুর কমিউটার ট্রেন সকাল ১০টা থেকে চিরিরবন্দর স্টেশনে অবস্থান করে।
বরিশাল:
বরিশালে চৌমাথা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও সমাধান পাচ্ছি না।’
গাজীপুর:
গাজীপুরেও একই দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তায় এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অবরোধে অংশ নেন এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রয়েল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভাওয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সকালে জয়দেবপুর-শিমুলতলী সড়কের ডুয়েট গেটের পাশে এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ভুরুলিয়া রেলগেট, শিববাড়ী মোড় হয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থান নেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
একই দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নানা দাবিতে স্লোগান দেন এবং এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এর ফলে সড়কের দুপাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, যদি তাদের দাবিগুলো পূরণ করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। এ ছাড়া রাজশাহীতেও দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন