ঢাকা শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঝিনাইদহ ও দিনাজপুরে গণপিটুনিতে নিহত ২

ঝিনাইদহ ও দিনাজপুর প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

চুরির অভিযোগ সংক্রান্ত পৃথক দুটি ঘটনায় ঝিনাইদহ ও দিনাজপুর জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় পিটিয়ে দুই যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল শুক্রবার আহত হয়ে হাসপাতালে থাকা অবস্থায়। ঝিনাইদহ ও দিনাজপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর

ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সুজন মিয়া (২৮) নামে এক যুবক। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে তার মৃত্যু হয়। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার বাগড়া গ্রামের কাশেম মালের ছেলে। তবে বৈবাহিক সূত্রে তিনি ঝিনাইদহের পাওয়ার হাউস পাড়ায় শ^শুরবাড়িতে থাকতেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চোর সন্দেহে সুজন মিয়া নামের ওই ব্যক্তিকে দুইজন বাঁশ দিয়ে পিটাচ্ছে। আর একজন ধরে রেখেছে। পাশেই কেউ ছবি তুলছে, কেউ তাকিয়ে দেখছে। সেখানে হাসপাতালের স্টাফরাও ছিল, কিন্তু গণপিটুনি ঠেকাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

জানা গেছে, গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের এক রোগীর স্বজনের ব্যাগ থেকে ৪০০ টাকা চুরি করে সুজন মিয়া। সে সময় ঘটনাস্থলেই রোগীর স্বজনরা তাকে ধরে ফেলে। তখন তারাসহ উৎসুক মানুষ মিলে কয়েক দফায় শিশু বিভাগেই পিটুনি দেয়। এরপর সুজন মিয়াকে হাসপাতালের নিচে নামিয়ে টিকিট কাউন্টারের সামনে এনে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে পাওয়ার হাউসপাড়ায় শ^শুরবাড়ি গেলে সেখান থেকেও তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই দিন দুপুরে হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরদিন গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারহানা শারমিন বলেন, মারপিটের হিস্ট্রি নিয়ে অজ্ঞাত হিসেবে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, আমি ওকে ডিভোর্স দিয়েছি। তবুও সে আমাদের বাড়িতেই থাকে। এর আগেও সে কয়েকবার এমন চুরির ঘটনা ঘটিয়েছিল। রাতে সুজনকে হাসপাতালে গণপিটুনি দিলে সকালে সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং কোনো মারধর করিনি আমরা।

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিনাজপুর:

দিনাজপুরের বিরামপুরে টাকা চুরির অভিযোগ তোলায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাজেদুল ইসলাম (৩৮) নামের এক যুবককে। 

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের জোলাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাজেদুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত অছির উদ্দিনের ছেলে। তিনি মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ছিলেন।

সাজেদুলকে পেটানোর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেনÑ একই গ্রামের রায়হান কবির (২২) ও তার চাচাতো ভাই নুরুন্নবী ইসলাম (২৩)। ঘটনার পর তারা পলাতক।

নিহত ব্যক্তির পরিবার ও প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে রায়হান কবির সাজেদুলের কাছে টাকা ধার চান। সাজেদুল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে রাখা সাজেদুলের ৬ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। সাজেদুল এ ঘটনায় রায়হান কবিরকে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে সে অস্বীকার করে। পরে এ নিয়ে বাগ্বিত-ার পর রায়হান তার চাচাতো ভাই নুরুন্নবীকে ডেকে আনেন। পরে দুজনে মিলে বাঁশের লাঠি দিয়ে সাজেদুলকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে সাজেদুল গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় বাধা দিতে গেলে সাজেদুলের মাকেও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাজেদুলের পরিবার তাকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা সাজেদুলের অবস্থার অবনতি দেখে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু পথে ফুলবাড়ী এলাকায় তার মৃত্যু হয়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকা- ঘটেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত দুজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।