রাশিয়ার নিজনি নভোগরদ শহরে গত ১৭ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি ২০২৫’। এই অ্যাসেম্বলিতে রাশিয়ার এক হাজার যুব প্রতিনিধির সাথে বিশ্বের ১২০টি দেশের আরও এক হাজার যুব প্রতিনিধি অংশ নেন। এদের মাঝে বাংলাদেশ থেকেও অংশ নেন ১৯ জন। অ্যাসেম্বলি চলাকালে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অংশ নেন ফেস্টিভ্যাল দপ্তরের উপ-মহাপরিচালক ভাখতাং খিকলান্দজে। বাংলাদেশের তরুণরা সৃজনশীল, মেধাবী এবং সংকল্পবদ্ধ উল্লেখ করে ভাখতাং জানান, রাশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়বে বলে প্রত্যাশা ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষের। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি তরুণদের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রাশিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রূপালী বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাওন সোলায়মান।
রূপালী বাংলাদেশ:
ফেস্টিভ্যালের বিভিন্ন অধিবেশনে রাশিয়ান বক্তারা বলছেন, সবার স্বপ্ন পূরণে অংশীদার হতে চায় রাশিয়া। রাশিয়ার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি কীভাবে অবদান রাখছে?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
তরুণ, সৃজনশীল এবং মেধাবীদের স্বপ্ন পূরণে রাশিয়া বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তবে অনেকেই সেগুলো সম্পর্কে জানেন না। তাদের সেই সুযোগগুলো সম্পর্কে জানাতে চাই। সেসব সুযোগের সুবিধা নিতে সবাইকে স্বাগত জানাই। আমাদের এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবাইকে জানানো যে, রাশিয়ায় বন্ধু, উন্নতি, ভালোবাসা এবং সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের বন্ধু উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো জানে, তাদের দীর্ঘ যাত্রায় আমরা পাশে রয়েছি। রাশিয়ার আতিথেয়তা, রাশিয়ান স্বত্বা এবং সবার সাথে সহযোগিতায় আমাদের প্রস্তুতি সবাইকে জানাতে চাই এই আয়োজনের মাধ্যমে। অর্থাৎ স্বপ্নপূরণে রাশিয়া যেসব সুবিধা ও কর্মসূচির মাধ্যমে রাশিয়া অবদান রাখতে পারে, সেগুলোই তরুণদের জানাতে এই আয়োজন।
রূপালী বাংলাদেশ:
তরুণদের নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক অভিপ্রায় কী?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের বন্ধু রয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ অথবা বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ নয়Ñ এমন কোনো পরিমাপক নেই আমাদের। আমরা বিশ্বের সবার সাথেই বন্ধুত্ব করতে চাই। এই আয়োজনে বিশ্বের ১২০টি দেশ থেকে প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। আর যারা আমাদের সহযোগী মনে করে কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, তাদের দিকে মনোযোগ রয়েছে আমাদের।
রূপালী বাংলাদেশ:
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি। রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
আমরা জানি, রাশিয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আমরা চাই প্রতিবছর এই সংখ্যা যেন বাড়তে থাকে, যেন তারা দক্ষ হতে পারেন। তারপর তারা বাংলাদেশে ফিরে যাবেন নাকি রাশিয়ায় থাকবেন সেটা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় না। আমরা চাই রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে তারা যেন আমাদের সহযোগিতা পেতে থাকেন।
রূপালী বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের যুবকদের মাঝে কী সম্ভাবনা এবং ইতিবাচক দিক আপনি লক্ষ্য করেছেন?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা সম্ভাবনাময়, কর্মতৎপর এবং সংকল্পবদ্ধ। তাদের সেই স্বপ্নপূরণে বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে আসা প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে তাদের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। তাদের সাথে কেবলই বন্ধুত্ব করতে চাই না বরং তাদের প্রতিভা অন্বেষণে এবং সম্ভাবনা উপলব্ধিতে কাজ করতে চাই।
রূপালী বাংলাদেশ:
গত বছর বাংলাদেশের তরুণরা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছে। নেপালেও সম্প্রতি এমনটা হয়েছে এবং বিশ্বের আরও বেশকিছু দেশে তরুণরা সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে তরুণদের জন্য আয়োজিত এই ধরনের ফেস্টিভ্যাল থেকে তরুণরা কীভাবে উপকৃত হতে পারেন?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণরাই এখন চালিকা শক্তি এবং আমরা তাদের জন্য সর্বোচ্চ ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি। রাশিয়ায় একটি কথা আছে যে, ‘সময় এখন তারুণ্যের’। ইয়ুথ পলিটিক্স বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে আমরা প্রস্তুত এবং যখন ‘ইয়ুথ’ বলছি তখন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের কথা বলছি।
রূপালী বাংলাদেশ:
এই আয়োজন থেকে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের দেশে কী নিয়ে ফিরে যাবেন বলে আয়োজক হিসেবে আপনারা প্রত্যাশা করেন?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বেশকিছু কর্মসূচি রেখেছি। বিশেষ করে জনপ্রশাসন, মিডিয়া ও নিউ মিডিয়া এবং উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে তরুণদের জন্য অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই তরুণরা এখানে সেই কর্মসূচি সম্পর্কে জানুক এবং হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা নিক। তারপর দেশে ফিরে গিয়ে সেসব কর্মসূচি অথবা তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনায় অন্য কোনো কর্মসূচি থাকলে, সেগুলো বাস্তবায়ন করুক। আর সেগুলো বাস্তবায়নে যদি আমাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, তারা যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের ‘রিয়েল টাইম’ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।
রূপালী বাংলাদেশ:
রাশিয়ায় কি তাহলে সবার স্বপ্নপূরণ হবে? তরুণরা কি তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাশিয়ার ওপর ভরসা রাখতে পারে?
ভাখতাং খিকলান্দজে:
অবশ্যই। রাশিয়া এমন একটি দেশ যেখানে সবার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। রাশিয়া অনেকের জন্য ‘মিরাকল প্লেস’ হতে পারে কারণ আমরা বেশকিছু দারুণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি যেমনÑ ২০১৪ অলিম্পিক, ২০১৮ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ এবং অনেক কিছু। আমরা চাই বিদেশি অতিথিরা রাশিয়া আসুক এবং আসল রাশিয়া সম্পর্কে জানুক, বুঝুক এবং অনুভব করুক। রাশিয়ান মানুষ কতটা আন্তরিক, সেটা তারা দেখুক। কাজেই দৃঢ়তার সাথে বলছি, রাশিয়াকে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে আপনারা যদি কোনো স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন