*** স্ত্রী, শ্যালিকা ও ভায়রা ভাইয়ের নামে সম্পদ ক্রয়
*** সরকারি খাল দখল করে দোকানপাট নির্মাণ
*** আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চালাচ্ছেন রাইস মিল
*** জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পানির ট্যাঙ্ক, গভীর নলকূপ নিজ বাড়িতে স্থাপন
কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মমিন আলী যোগ দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই যেন টাকার মেশিনে পরিণত হয়েছেন। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অনুমোদন ছাড়াই করেছেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং সরকারি সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার বছরে মমিন আলী বনে যান অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বরাদ্দ ছাড়াই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের একাধিক পানির ট্যাঙ্ক-পাইপ নিজের বাড়িতে ব্যবহার করছেন তিনি।
জানা যায়, ২০২২ সালে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মমিন আলী। প্রথমে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় যোগ দিলেও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল হোসেনের সুপারিশে যোগ দেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলায়। এর পর থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এ ঘনিষ্ঠতার জোরেই অল্প সময়ে আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তিনি লালমাই উপজেলায় কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা গ্রামে। বাবা স্থানীয় কৃষক সুরুজ মিয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির ছাদে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তিনটি পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করা আছে। উঠানে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। অথচ স্থানীয় দপ্তরের রেকর্ডে তার নামে কোনো সরকারি টিউবওয়েল বা ট্যাঙ্ক বরাদ্দ নেই। অভিযোগ আছে, পুরাতন রডও প্রভাব খাটিয়ে এনে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করেছেন তিনি।
জানা যায়, লাকসাম উপজেলার কালিয়াচৌ এলাকায় স্ত্রী, শ্যালিকা ও ভায়রা ভাইয়ের নামে সম্পদ ক্রয়ের রেকর্ড গড়েছেন মমিন আলী। অনুমোদন ছাড়া প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির সামনের সরকারি খাল দখল করে দোকান নির্মাণ এবং ভেতরে স্থাপন করেছেন একটি রাইস মিল। আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তোয়াক্কা করছেন না সরকারি আইন ও নিয়মবিধি।
ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করছেন কোটি টাকার বহুতল ভবন। বাড়ি করার অনুমোদনের জন্য স্কয়ার ফিট হিসাব করে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশকে টাকা দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে আজগরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ইউনিয়ন পরিষদে কোনো টাকা জমা হয়নি, ভবন নির্মাণে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
বিধি অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবী ৫০ হাজার টাকার বেশি সম্পদ ক্রয়ের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এ বিধি সম্পর্কে তিনি জানেনই না। তাই সম্পদ ক্রয় ও বাড়ি তৈরি করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেননি।
লাকসামের কালিয়াচৌ গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের আগে মমিন আলী ১২ শতক জমি ক্রয় করেন বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে। পরবর্তী সময়ে আরও ১০ শতক জমি কেনেন। জমি কেনাবেচার খোঁজ নিতে তিনি সোর্স নিয়োগ করেছেন। দাম যতই হোক, জমি নির্ধারণ হলেই নগদ টাকায় লেনদেন করেন এবং সব সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করেন স্ত্রী, শ্যালিকা বা ভায়রা ভাইয়ের নামে। স্থানীয়দের ভাষায়, তার সম্পদ ক্রয় দেখে মনে হয় তিনি যেন টাকার মেশিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মমিন আলী বলেন, ‘নিজের টাকায় গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। শাওন নামে মনোহরগঞ্জের এক ছোট ভাই (ঠিকাদার) থেকে পানির ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করেছি। লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে হাজিগঞ্জ সার্কেলের এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে কল বসানোর জন্য নাঙ্গলকোটের সাব-কন্ট্রাক্টর তাজুল ইসলামের কাছ থেকে পাইপ নিয়েছি। বাড়ি নির্মাণে অনুমতি বা রাইস মিল ও দোকানে বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সংযোগ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আমার নামে তেমন কোনো সম্পদ নেই; এগুলো আমার স্ত্রী, শালী ও ভায়রার সম্পত্তি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন