বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৪৭ এএম

পীরগাছায় ১৩ জনের  অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, দুজনের মৃত্যু

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৪৭ এএম

পীরগাছায় ১৩ জনের  অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, দুজনের মৃত্যু

* ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দুই উপজেলায়ও

রংপুরের পীরগাছার পর মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে ওইসব এলাকায়। ইতিমধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা জেলার পীরগাছার ১৩ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১৮ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে।

আইইডিসিআরের আরেকটি সূত্র বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে, এমন একজন ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসেছেনÑ এমন কথাও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশে রোগের প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, আমরা পীরগাছার ১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে ১৩ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ৩২ জন রোগীর তথ্য আছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত।

তিনি বলেন, সব মিলে ৬০ জন রোগীর তথ্য আমাদের কাছে আছে। কিছুদিন আগে আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম গিয়েছিল আক্রান্তরা যাতে শঙ্কিত না হন এ জন্য তাদের সচেতন করতে। সেখানে ১৫-২০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের ৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন।

অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার দুজনের মৃত্যু নিয়ে তানভীর হাসনাত দাবি করেন, মারা যাওয়া দুজনের মেডিকেল রিপোর্ট তারা (আইইসিডিআর) দেখেছেন। এ দুটি মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে। উভয়ের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল।

পীরগাছা উপজেলার দেউতি, পূর্ব পারুল, আনন্দী ধনীরামসহ কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে দেড় শতাধিক গবাদি পশু মারা গেছে।

এদিকে রংপুর বিভাগজুড়ে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি পশু জবাই করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। বিভাগে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার রয়েছে, তবে কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।

আইন অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা একসঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। পশুর রোগ ছড়াচ্ছে মানবদেহে।

প্রচলিত আইনে মাংস ব্যবসা শুরু করার আগে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। এরপর প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাংস বিক্রির লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু রংপুর বিভাগের অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরই এ ধরনের সনদ নেই। অনেকেই নিয়মটির ব্যাপারে জানেনই না।

সম্প্রতি পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে পাশের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়ও। সেখানেও মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেই। করা হয় না নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই উপজেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি স্পটে দৈনিক গরু-ছাগল জবাই করা হয় ৬০ থেকে ৬৫টি।

সুন্দরগঞ্জ পৌর বাজার ইজারাদার ও মাংস ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, পৌরসভায় নিয়মিত পরীক্ষা হয়। এটা সব জায়গায় করা উচিতÑ বিশেষ করে বামনডাঙ্গা, রামগঞ্জ ও বেলকায়। এর মধ্যে রামগঞ্জ বাজারে বেশি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। আর এ মাংসগুলো তারা সব জায়গায় পাইকারি দেয়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা এবং রামগঞ্জ বাজারের কসাইখানায় পুরো সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা। সেখানে পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই গরু-ছাগল জবাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বাকি কসাইখানাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

একই চিত্র রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলাও। এখানে মাংস ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬০-এর বেশি; কিন্তু কারও লাইসেন্স নেই। এমনকি এই উপজেলায় জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হয় না।

তারাগঞ্জের মাংস ব্যবসায়ী হাসিনুর ইসলাম বলেন, মাংস ব্যবসার জন্য প্রাণিসম্পদ থেকে লাইসেন্স নিতে হয় এটা জানতাম না। কয়েক দিন আগে মিটিংয়ে শুনেছি। এখন নেব। আমরা অসুস্থ পশু জবাই করি না। ওই জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি না। শেড দখলে, তাই গরু বাইরে জবাই করি।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকসহ সচেতন সমাজ। তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদি পশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, এটা শুধু পীরগাছা নয়, পরবর্তী সময়ে কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরেও আমরা একই ধরনের উপসর্গের রোগী পেয়েছি। ইতিমধ্যে আরও আট রোগীর নমুনা আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছে। সেটার রিপোর্ট (প্রতিবেদন) এখনো আসেনি।

অসুস্থ গবাদি পশু জবাই ও অসুস্থ প্রাণীর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এদিকে নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে তা গবেষণার বিষয়। যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। এ-সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রোগটা যেহেতু প্রাণী থেকে আসে, এটা প্রতিরোধে মূল কাজ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, জেলায় ১৩ লাখের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদি পশুকে অ্যানথ্যাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। অ্যানথ্র্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নতুন করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদি পশু পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রংপুর বিভাগের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, প্রাণিসম্পদ থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাই। কিন্তু চরম জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে হাট-বাজারগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!