বেলা ১১টা থেকে শুরু। সড়কের পাশে বটগাছের নিচে বিভিন্ন স্থানে বিলাতি ধনেপাতার স্ত’প। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন ধনেপাতার বস্তা নিয়ে কৃষকেরা। বাতাসে বিলাতি ধনেপাতার ঘ্রাণ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলাতি ধনেপাতার বাজার নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার আমলাবো ইউনিয়নের বটেশ্বর বাজারেই বসে। এই বাজার বিলাতি ধনেপাতার জন্য সুপরিচিত।
শনিবার, সোমবার ও বুধবার এই বাজারের হাটবার হলেও প্রতিদিনই এখানে বিলাতি ধনেপাতা বিক্রি হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিলাতি ধনেপাতা কেনার জন্য পাইকারেরা এখানে আসেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলাবো উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে বিলাতি ধনেপাতা হয়। পার্শ্ববর্তী শিবপুর, মনোহরদী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিলাতি ধনেপাতা উৎপাদন হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে আকার ও স্বাদের জন্য এই অঞ্চলের ধনেপাতার জনপ্রিয়তা রয়েছে। আর এসব এলাকার ধনেপাতার বিক্রয়কেন্দ্র হলো বটেশ্বর বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা কৃষকের কাছ থেকে কিনে থাকেন ধনেপাতা। তারপর ট্রাকে ভরে নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
ক্রেতা বোরহান উদ্দিন জানান, প্রতিদিন আমি হবিগঞ্জ থেকে পিকআপ নিয়ে এই বাজারে ধনেপাতা কিনতে আসি। এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিলাতি ধনেপাতা কিনে থাকি। এখান থেকে কিনে নিয়ে হবিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকি। প্রতি কেজি বিলাতি ধনেপাতা ১০০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকায় কিনে থাকি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন বলেন, এই বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে ধনেপাতা বেচাকেনা শুরু হয়। এখান থেকে কিনে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকি। এই বাজারে থেকে বেচাকেনায় কোনো খাজনা দিতে হয় না। দৈনিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার পাতা বেচাকেনা হয়।
কৃষক সাহাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৮ থেকে ১০ শতাংশ জমিতে বিলাতি ধনেপাতা করেছি। আমার খরচ হইছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আর বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।’ বেকার যুবকেরা বিলাতি ধনেপাতা চাষ করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন বলে তার অভিমত।
বেলাবো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বেলাবো উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনেপাতা চাষ করা হয়। বিলাতি ধনেপাতাটা হয় অনাবাদি জমিতে। এটাও আবাদের আওতায় আসছে। অনাবাদি জমিতে সারা বছর একটা ফসল থাকে, সেখানে বিলাতি ধনেপাতা চাষ করার মাধ্যমে দুটো ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এক বিঘা জমি থেকে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার ধনেপাতা বিক্রি করা যায়। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন